রাজধানীর আদাবরের ‘মাইন্ড এইড’ হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপন হত্যায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এএসপি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে এই সরকারি চিকিৎসককে। এরই মধ্যে আনিসুলের মৃত্যুর ঘটনায় চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে মাইন্ড এইডের অপকর্মে ডা. মামুনের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে আসে।
জানা গেছে, হাসপাতালটির ম্যানেজারের সঙ্গে আনিসুলের ব্যাপারে কয়েক দফা আলাপ করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় নিয়মিত মাইন্ড এইডে রোগী পাঠাতেন। পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকেও নিজের হাসপাতাল থেকে কৌশলে বিতাড়িত করে মাইন্ড এইডে পাঠিয়েছিলেন তিনি। অ্যালবাট্রস মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস নামে তার ব্যক্তিগত একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগও রয়েছে, যেখানে দীর্ঘ পরামর্শসেবার সংগে জড়িতদের পাঠানো হতো। আর মারাত্মক রোগী হলে পাঠাতেন মাইনে এইডে।
মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অনৈতিক বাণিজ্য হয়, এটা জেনেও আনিসুলকে সেখানো পাঠানো হয়। ঘটনার দিন মাইন্ড এইডের ম্যানেজার আরিফকে ফোন করে ডা. মামুন পুলিশ কর্মকর্তাকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। তার মৃত্যুর পর ফোনালাপে মাইন্ড এইডের ম্যানেজারকে লাশটি তার হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে বলেন এবং ডাক্তার মামুন তখন তাকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন বলে জানা গেছে।
গত ৯ নভেম্বর ২০২০ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে আনিসুল করিমকে তার পরিবার মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসময় কয়েকজন কর্মচারী তাকে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরই পরিবারকে আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন জানানো হয়।
এরপর তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানে চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে পুলিশ কর্তৃক সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে হাসপাতালের ছয় জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেছেন। আরও দেখা যায়, তার পা চেপে ধরে মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করেছেন। এসময় কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পেছনে বাঁধা হয়।
বিগত কয়েক দশকে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক মানসিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, যা এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে এসব হাসপাতালের সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা প্রশ্ন বা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা এ ঘটনায় আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠল।
এএসপি আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় চিকিৎসকসহ এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মামলায় মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় (৩৫), কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন শেফ মাসুদ (৩৭), ওয়ার্ড বয় জুবায়েত হোসেন (১৯), ওয়ার্ড বয় তানভীর হাসান (১৮), ফার্মাসিস্ট তানিফ (২০), ওয়ার্ড বয় সঞ্জীব চৌধুরী (২০), ওয়ার্ড বয় অসীম চন্দ্র পাল (২৪), ওয়ার্ড বয় লিটন আহাম্মদ (১৮) ও ওয়ার্ড বয় সাইফুল ইসলাম পলাশ (৩৫)।
মিই/আরা/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ