ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় রদবদলের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির একঝাঁক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধণ, বাবুল সুপ্রিয় ও প্রতিমন্ত্রী অশ্বিন চৌবেসহ ১৩ জন পদত্যাগ করেছেন। এনডিটিভিসহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল আনতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরছে নানা মহল। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মন্ত্রিসভায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছেন মোদি। এর আগেই বেশ কজন পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ও একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অশ্বিন চৌবে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক ও শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাংওয়ারও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।
খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় রাসায়নিক ও সারবিষয়ক মন্ত্রী সদানন্দ গৌদা, নারী ও শিশু কল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোর্তে, ভোক্তা কল্যাণবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাও সাহেব ধানবে পাতিল, জলশক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রতন লাল কাটারিয়াও এ তালিকায় রয়েছেন। পদত্যাগ করেন উপভোক্তা বিষয়ক, খাদ্য ও গণবন্টন প্রতিমন্ত্রী রাওসাহেব পাটিল।
এ সারিতে যুক্ত হয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। তিনি আসানসোলের সাংসদ।এছাড়াও এই তালিকায় আরও অনেকে রয়েছেন।
এ বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে ভারতে দৈনিক করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। পরে এপ্রিল-মে মাসে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এপ্রিল থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশটিতে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন থেকে ৪ লক্ষাধিক মানুষ। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল ৪ হাজারের বেশি।
এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। চলমান এই সমালোচনার মধ্যেই বুধবার পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এবং একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অশ্বিন চৌবেসহ অন্যান্যরা।
এনডিটিভি বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে তা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কোন সদস্যের ভূমিকা কেমন ছিল সে বিষয়ে সম্প্রতি একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সেই প্রতিবেদন জমাও দিয়েছেন তারা।
সেই সূত্র ধরেই সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় রদবদলের ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই বর্তমান মন্ত্রিসভার ১৩ সদস্যের পদত্যাগের খবর এলো।
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, বুধবার নতুন ৪৩ জন সদস্য ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন।
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে মন্ত্রিসভার রদবদলে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার আট রাজ্যের রাজ্যপাল রদবদল করা হয়েছে। জানা গেছে, যেসব রাজ্যের রাজ্যপাল বদলানো হয়েছে, সেগুলো হলো— কর্ণাটক, মিজোরাম, গোয়া, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও ত্রিপুরা। এর মধ্যে থেবরচাঁদ গেহলটকে ভারতের কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে কর্ণাটকের রাজ্যপাল করা হয়েছে।
মোদির মন্ত্রিসভায় এই মুহূর্তে সদস্য রয়েছেন ৫২ জন। অনেক মন্ত্রীর কাছে রয়েছে একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তাদের এই ভার লঘু করতে আরও ৩১ জনকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আর এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নেতা। এলজেপি নেতা পশুপতি কুমার পরস এবং জেডিইউ নেতা আরসিপি সিংয়ের নাম নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। জেডিইউ দলের চারজনকে মন্ত্রী করার দাবি জানালেও তাদের দুইজনকে মন্ত্রী করা হতে পারে।
শোনা যাচ্ছে, মন্ত্রী হতে পারেন নিশীথ প্রামাণিক। বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি দিল্লিতে রয়েছেন। এর আগে দিল্লিতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। রাজবংসী ভোট ধরে রাখার ক্ষেত্রে নিশীথ বড় ভূমিকা পালন করেছেন উত্তরবঙ্গে।
বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য রদবদলের কারণেই বিজেপি সংসদ সদস্যদের আগেভাগে রাজধানীতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি কয়েকদিনের জন্য ইন্দোরে গিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তলব পেয়ে সেই সফর কাটছাঁট করে দ্রুত দিল্লি পৌঁছান তিনি। আগামী বছরের শুরুতে ভারতের পাঁচ রাজ্য উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মনিপুর ও পাঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিন এক সরকারি কর্তা জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় ৫০ বছরের কমবয়সী ১৪ জন মন্ত্রী থাকছেন।
সূত্রের খবর, নতুন মন্ত্রীদের অধিকাংশেরও শিক্ষাগত যোগ্যতা— ডক্টরেট, এমবিএ, স্নাতকোত্তর। যেসব মহিলাদের প্রাশাসনিক কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদেরও জায়গা করে দেওয়া হবে মন্ত্রিসভায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৮
আপনার মতামত জানানঃ