নতুন অর্থবছরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য প্রস্তাবিত ৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেট বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অনুমোদন না পেলে বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর কার্যক্রম থমকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা। রয়টার্সের খবর
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাজেট নিয়ে এ জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে চীনকে দায়ী করছেন অনেক কূটনীতিক। এ ছাড়া দরকষাকষির পরিবর্তিন প্রক্রিয়াকেও দায়ী করা হচ্ছে। এসব কারণে বাজেটের বিষয়ে সমঝোতা বিলম্বিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান ক্যাথেরিন পোলার্ড জানান, যদি সময়মত নতুন বাজেট পাস না হয়, সেজন্য বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে ১২টি শান্তি মিশনকে, যেগুলোর বেশিরভাগই আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে আমরা এখনও আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী যে, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।’
ক্যাথেরিন পোলার্ড বলেন, ৩০ জুনের সময়সীমার মধ্যে যদি বাজেট পাস না হয়, তাহলে কেবল মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘের সম্পদ, কর্মী ও শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করার এখতিয়ার রাখেন।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনের প্রধান জ্যঁ-পিয়ের লাকোয়া বলেছেন, বাজেট না পেলে মিশনগুলোর কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে সীমিত করে ফেলতে হবে। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া, কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা কিংবা শান্তিরক্ষার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ও মধ্যস্থতা করার মত কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের শান্তি মিশনের বাজেটের জন্য সবচেয়ে বড় অনুদান দেয়। মোট বরাদ্দের ২৮ শতাংশ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই আসে, এছাড়া চীন ১৫.২ শতাংশ এবং জাপান ৮.৫ শতাংশ দেয়।
বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন৷ মিলেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারও৷ কিন্তু বিশ্বনেতারা এখন এই মিশন থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন৷ পিছিয়ে যাচ্ছে সদস্য দেশগুলোও৷
প্রাথমিকভাবে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নিতে ১৯৪৮ সালে শান্তিরক্ষা মিশন গঠন করা হয়৷ জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত বেশিরভাগ দেশ তাতে সমর্থন দেয়৷
ওই বছর ইউনাইটেড ন্যাশনস ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন (ইউএনটিএসও) নামে প্রথম মিশনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ব্লু হেলমেট’র যাত্রা শুরু হয়৷ ওই মিশনের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল ও তাদের প্রতিবেশী আরব দেশগুলো মধ্যে যুদ্ধবিরতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা৷
পরের বছর কাশ্মীর নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তিতে কাজ শুরু করে ইউনাইটেড ন্যাশনস মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউএনএমওজিআইপি)৷ ইউএনটিএসও এবং ইউএনএমওজিআইপি-র কার্যক্রম এখনো চলছে৷ কিন্তু কোথাও শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি৷
নানা দেশের প্রায় ৯০ হাজার সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন৷ ২০১৫ সালের আগে এই সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজারের বেশি ছিল৷
শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় স্টোকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিচ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক ফর দের লিন বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনেক সদস্যের মতে শান্তিরক্ষা মিশনের খরচ অনেক বেশি, সেই তুলনায় অর্জন খুবই সামান্য৷ এ কারণে নেতারা এই খাতে বাজেট কমাতে চাইছেন৷ ট্রাম্প প্রশাসন যার নেতৃত্ব দিয়েছে৷
শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন৷
আফ্রিকায় মোতায়েন করা শান্তিরক্ষী বাহিনীর ৭০ শতাংশই এখন দক্ষিণ সাহারা অঞ্চলে অবস্থান করছে৷ এ অঞ্চলের বড় বড় কয়েকটি মিশন বন্ধ রেখে যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়া ও ইয়েমেনে নতুন মিশন শুরু করতে হয়েছে৷
বর্তামনে শান্তিরক্ষী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য সাব-সাহারা আফ্রিকা বা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসে৷
লিন বলেন, ‘আফ্রিকার দেশগুলো এখন মূলত তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে রক্ষী পাঠায়৷ যেমন, ইথিওপিয়া শুধু সোমালিয়া বা সুদানে রক্ষী পাঠায়৷ তাদের লক্ষ্য খুবই পরিষ্কার৷ তারা আগে নিজেদের রক্ষা করতে চায়৷ একই ভাবে মালির প্রতিবেশী দেশগুলো শুধু মালিতে রক্ষী পাঠায়৷ তারা চায় মালির সমস্যা যেন শুধু সেখানে থাকে এবং তাদের দেশের শান্তি বিনষ্ট না হয়৷’
পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা মিশনে বলার মত আকারের সেনা পাঠায়৷ যদিও তাদের বেশিরভাগই আফগানিস্তানে কাজ করে৷ এই সংখ্যাও কমে যাবে৷ কারণ, যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং এর কার্যক্রমও চলমান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ