কুষ্টিয়ায় জমির দলিল সম্পাদনের সময় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি এম রফেলের কাছ থেকেও ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তার ফেসবুকে বিষয়টি তুলে ধরেন। এ ঘটনায় আজ বুধবার কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সদর সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ তাকে বরখাস্ত করেন।
যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন আক্কাস আলী ও কর্মচারী মুকুল হোসেন ঘুষ নিয়েছেন। তিনি জানান, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তিনি একটি ব্যাংকের মর্টগেজ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য যান। সঙ্গে ছিলেন তার বড় ভাই। তাদের সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রি করতে যান তিনি।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, কাজ শেষে অফিস সহকারী মুকুল ও পিয়ন আক্কাস ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। টাকার রশিদ চাইলে তারা তা দিতে পারবে না বলে জানায়। নিজের পরিচয় দেওয়ার পর পাঁচ হাজার টাকা কমিয়ে ২৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
ঘুষের দাবিতে অটল থাকায় তার বড় ভাই ১০ হাজার টাকা দেন। পরে বিকেলেই এই অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে তুলে ধরেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানির পর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও দলিল লেখকরা বৈঠক করেন। এরপর আব্দুর রাফেলকে ফোন দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং টাকা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে তিনি টাকা ফেরত না নিয়ে ঢাকা চলে আসেন।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রাফেলের দলিলটি ব্যাংকের মর্টগেজ দলিল। বিষয়টি দেখভাল করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এটির জন্য টাকা নেওয়ার কথা নয়।
রাফেল বলেন, ওটা একটি সরকারি অফিস। আমি আমার পরিচয় দেওয়ার পরও তারা টাকা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, ‘ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। তবে, ওই কাজটি আমি দ্রুত করে দিয়েছিলাম।’
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ ও অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম ঘুষের এক লাখ চার হাজার ৪০০ টাকাসহ দুদকের অভিযানে হাতেনাতে ধরা পড়েন। চলমান ওই মামলায় জামিনে মুক্তি লাভের পর ওই সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রতকে পুনরায় এখানে সপদে বহাল রাখা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রায় সকল ভূমি অফিসেই জনগণকে হয়রানির শিকার হয়ে কর্মরত কর্মচারীদের ঘুষ দিতে হয়। কাগজপত্র সঠিক হলেও যেমন ঘুষ দিতে হয়, তেমনি কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি থাকলেও দিতে হয় ঘুষ। এমন জঘন্য ও বিশ্রী দশার কবলে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারিভাবে এমন অবস্থার প্রশমনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
তারা মনে করেন, বাংলাদেশে ভূমি অফিসের অনিয়ম নতুন কোনো ঘটনা নয়। এ দেশের সাধারণ মানুষ বরাবরই এদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল। ফলে যে কোনো সাধারণ মানুষ নামজারি করা, হালনাগাদ সার্টিফিকেট, নকল তোলা প্রভৃতি ভূমি সংক্রান্ত কাজ করতে গেলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকতা-কর্মচারীদের জাতীয় স্বার্থে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার প্রবণতা ত্যাগ করা জরুরি।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/২০২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ