লন্ডনে আশ্রয় নেয়া আরব আমিরাতের প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক আলা আল-সিদ্দিক লন্ডনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। রোববার আমিরাতের মানবাধিকারকর্মীরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাদের দাবি, লন্ডনে সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে আলা আল সিদ্দিককে। খবর ডেইলি সাবাহ ও আলজাজিরার।
২০১২ সাল থেকে সিদ্দিক ও তার স্বামী আব্দুর রহমান বাজুবীর রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন। ২০১১ ও ২০১২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার আলা আল সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনে, যেখানে বলা হয় তিনি রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটকও করা হয়। এরপর যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন সিদ্দিক ও তার স্বামী আব্দুর রহমান বাজুবীর।
আলা আল সিদ্দিক মানবাধিকার সংগঠন এএলকিউএসটি নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। মানবাধিকার সংগঠনটি সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পুরো গাল্ফ রিজিয়ন নিয়ে কাজ করে। পরে এক টুইট বার্তায় সিদ্দিকের মৃত্যুর ধরন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এএলকিউএসটি।
বাবা ও অন্যান্য বন্দির মুক্তির দাবিতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছিলেন। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় আমিরাত থেকে পালিয়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন আলা। শনিবার লন্ডনের সড়ক থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, আরব দেশগুলোর প্রথিতযশা মানবাধিকার গ্রুপ আল কুস্তের নির্বাহী পরিচালক পদে ছিলেন আলা। অলাভজনক এই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানটি আমিরাতসহ গোটা আরব বিশ্বে জনগণের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে। এই অধ্যাপক আমিরাত রাজতন্ত্রের কড়া সমালোচক হিসেবেও পরিচিত।
আলার অকাল ও হঠাৎ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মানবাধিকারকর্মীদের মাঝে। আল কুস্তের কর্মীরা তার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
সিদ্দিকের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন বিশ্বের অন্যান্য মানবাধিকারকর্মীরা। জায়ান্ট লিবার্টি নামের যুক্তরাজ্যের একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে, সিদ্দিকের মৃত্যুতে বিশ্ব মানবাধিকার আন্দোলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এক টুইট বার্তায় ফাতিমা সাইদ নামের এক মানবাধিকারকর্মী বলেছেন, আলা আল সিদ্দিক জীবনের একটি বড় অংশই কাটিয়েছেন নিজের বাবাসহ বিনাদোষে কারাগারে বন্দীদের মুক্তির দাবিতে। তার বাবা হয়তো একদিন কারামুক্তি পাবেন কিন্তু দেখতে পারবেন না মেয়ে সিদ্দিককে।
আল আল-সিদ্দিকের বাবা মোহাম্মদ সিদ্দিকও একজন স্বনামধন্য অধিকারকর্মী। ২০১৩ সাল থেকে তিনি আমিরাতে কারাবন্দি। ২০১৩ সালে আলা আল সিদ্দিকের বাবা মোহাম্মদ আল সিদ্দিককে গ্রেফতার করে সংযুক্ত আরব আমিরাত পুলিশ। তখন থেকেই কারাগারে আছেন তিনি।
‘আজ আমিরাতের বিখ্যাত গবেষক ও সৎ অধ্যাপক আলা আল-সিদ্দিক দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার বাবাও আমিরাতের কারাগারে বন্দি’—এক শোকবার্তায় বলেন সৌদি আরবের বিখ্যাত মানবাধিকারকর্মী আবদুল্লাহ আল আওদা।
দোহা নিউজের বরাত দিয়ে ডেইলি সাবাহর খবরে বলা হয়েছে— আলা ও তার স্বামী ২০১২ সালে কাতারে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। সেই সময় তারা সেখানে আত্মীয়ের বাসায় থাকতেন।
তার কাতারে অবস্থানের কারণে দেশটির সঙ্গে আমিরাতের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালে কাতারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদাল রাহমান বিন জসীম আল থানি বলেন, আলা আল-সিদ্দিক সে দেশে অবস্থান করায় আমিরাতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। পরে আবুধাবি আলাকে তাদের হাতে তুলে দিতে কাতারকে চাপ দেয়। এমতাবস্থায় লন্ডন চলে যান আলা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ