ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদের সাবরমতী নদীতে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে শহরটির কাঁকরিয়া এবং চান্দোলা হ্রদের পানি থেকেও এই ভাইরাস মিলেছে।
সাবরমতী নদী এবং দুই হ্রদের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালায় গান্ধীনগর আইআইটি ও জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির (জেএনইউ) স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সের গবেষকরা। তারাই এসব জলাশয়ে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ভারতে এই প্রথম কোনো নদীতে করোনাভাইরাস পাওয়া গেল। গান্ধীনগর আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মনীশ কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন, নদী ও হ্রদে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। অধ্যাপক কুমার জানান, সাবরমতী নদী থেকে ৬৯৪টি, চান্দোলা থেকে ৫৪৯ এবং কাঁকরিয়া হ্রদ থেকে ৪০২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে।
মনীশ কুমার আরও বলেন, হ্রদ ও নদীতে সার্স-কভ-২ অর্থাৎ নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তারা প্রমাণ পেয়েছেন, প্রাকৃতিক উৎসের জলে এই ভাইরাস দীর্ঘদিন পর্যন্ত সজীব থাকতে পারে। এতদিন এ বিষয়টি অজানা থাকায়, পানিতে করোনাভাইরাস মিশে যাওয়া আটকাতে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। আইআইটি ও জেএনইউর এ গবেষকরা চাইছেন সারা দেশেই এরকমভাবে নদ-নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক জলের উৎসগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হোক।
উত্তরপ্রদেশে গঙ্গায় বহু করোনা রোগীর দেহ ভাসতে দেখা গিয়েছিল। এ নিয়ে ভারতজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, নদীর পানিতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব নিয়ে। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেই এবার সাবরমতী নদীর পানিতে মিলল করোনাভাইরাস। প্রথমে বিহার রাজ্যে নদীতে লাশ ভেসে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তা অনুসন্ধানে দেখা যায়, সব লাশ আসছে উত্তর প্রদেশ থেকে।
ভারতীয় একাধিক মিডিয়ায় দেখা যায়, কীভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে নদীতে করোনায় মৃতদের লাশ ফেলা হচ্ছে। ভারতে করোনা মহামারী পরিস্থিতি এখনো অতটা ভালো নয়। আগের তুলনায় দেশটিতে সংক্রমণের হার কমলেও মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে। এর মধ্যেই গতকাল ভারতের বিজ্ঞানীরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী অক্টোবর নাগাদ ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি
চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে আগের দিনের তুলনায় ফের বেড়েছে দৈনিক সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার।
এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৭ কোটি ৮৫ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার।
এছাড়া, একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৪ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৫ হাজার। এতে মহামারির শুরু থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭৪ জনে।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৬ লাখ ১৬ হাজার ৯১৭ জন মারা গেছেন। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী এক কোটি ৭৮ লাখ ২ হাজার ১৭৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২১ জনের।
অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে মোট আক্রান্ত দুই কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৭৬৮ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৭ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৭০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ