আগামী ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। শনিবার এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এমস)-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। তার কথায়, কোভিড সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাত অনিবার্য। এই পরিস্থিতিতে বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে টিকাকরণ কর্মসূচি সম্পন্ন করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, বিধিনিষেধ ও লকডাউন তুলে নেওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি আবারও না মানার প্রবণতা শুরু হবে। লোকসমাগম ও ভিড় বাড়বে। এ কারণে ছয় থেকে আট সপ্তাহ বা তার কিছু বেশি সময়ের মধ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও ভিড় এড়িয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারলে তৃতীয় ঢেউ আসা অনিবার্য।
এইমসের প্রধান গুলেরিয়া বলেন, ‘আমরা জানি, করোনাভাইরাস রূপান্তরিত হতেই থাকে। সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য নজরদারিও বাড়ানো প্রয়োজন। ভারতে মোট জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। এ বছরের শেষে ভারত সরকার ১৩০ কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০৮ কোটিকে টিকা দিতে চায়।’ টিকাদানের বিষয়টি প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন গুলেরিয়া।
গুলেরিয়া যুক্তরাজ্যে ডেলটা ধরনের সংক্রমণের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘সে দেশে এখন করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ চলছে। করোনাভাইরাস এখনো রূপান্তরিত হচ্ছে। আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’
এদিকে কোভিশিল্ডের প্রথম এবং দ্বিতীয় টিকার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বৃদ্ধির ঘটনায় কোনো নেতিবাচক খারাপ প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন রণদীপ গুলেরিয়া। পাশাপাশি প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রসঙ্গ তুলে লকডাউন ও বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ইতোমধ্যেই লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রণদীপ গুলেরিয়ার বক্তব্য, ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের উদাহরণ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। একইসঙ্গে তৃতীয় ঢেউ আসার আগে সংক্রমণের ‘হটস্পট’গুলো চিহ্নিত করে কোভিড পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’
অবশ্য কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, টিকা নেওয়া ও প্রাকৃতিক ভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেই তৃতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা কিছুটা কমবে।
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় কম শক্তিশালী হলেও চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই ভারতে আছড়ে পড়তে পারে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ভারতে একযোগে টিকা প্রয়োগের কাজ শুরু করে মোদি সরকার। তবে এরপর পাঁচ মাস পার হলেও দেশটিতে এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ টিকার দু’টি ডোজ করে পেয়েছেন। যদিও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ১০৮ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মোদি সরকার। তবে তা আসলেই পূর্ণ হবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
রয়টার্সের গবেষণা
ভারতের করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে হওয়া একাধিক গবেষণার একটি বার্তাসংস্থা রয়টার্সের গবেষণা। রয়টার্সের একটি জনমত জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৮৫ শতাংশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।
কয়েকজন অবশ্য সেপ্টেম্বর ও আগস্ট মাসেই তৃতীয় ঢেউয়ের প্রভাব শুরু হওয়ার বিষয়ে জানিয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে দ্বিতীয় ঢেউয়ে থেকে তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য অনেকটাই প্রস্তুত রয়েছে ভারত। এছাড়া সকল রকমের পূর্ব-প্রস্তুতিও নাকি নিয়ে রাখা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এইমস’র গবেষণা
ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের প্রভাব বাচ্চাদের ওপরে খুব বেশি পড়বে না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস)-এর গবেষণায় জানানো হয়েছে। এর আগে অবশ্য অন্য এক গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে- শিশুদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে চলেছে ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ।
মহারাষ্ট্রের কোভিড টাস্কফোর্সের গবেষণা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এইমস’র পাশাপাশি করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আলাদা গবেষণা করেছিল ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের কোভিড টাস্কফোর্স। গবেষণায় জানানো হয়- ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট বা করোনার ভারতীয় ধরনের কারণে রাজ্যটিতে ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাত অনেক বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে। এছাড়া সক্রিয় রোগীর সংখা পার হয়ে যেতে পারে ৮ লাখের গণ্ডি।
ভারতে করোনার পরিস্থিতি
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে ফের বেড়েছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কমেছে নতুন সংক্রমিত রোগী। এছাড়া প্রায় আড়াই মাস পর ভারতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখের কাছাকাছি।
শনিবার (১৯ জুন) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৬০ হাজার ৭৫৩ জন মানুষ। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন সংক্রমিত রোগী কমেছে দেড় হাজারের বেশি। সর্বশেষ এই সংখ্যাসহ মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৬ জনে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৪৭ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় গত একদিনে ৬০ জন বেশি মারা গেছেন। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৭ জন।
এদিকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি ভারতে প্রতিদিনই কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। একসময় দেশটিতে ৩৭ লাখের বেশি সক্রিয় রোগী থাকলেও কমতে কমতে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখের ঘরে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সক্রিয় রোগী কমেছে প্রায় ৪৮ হাজার। দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ৬০ হাজার ১৯ জন। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন শেষের পথে। কিন্তু চোখ রাঙাচ্ছে তৃতীয় ঢেউ।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৪১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ