চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংলাপ করার নরম সুর বাজালেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় যুদ্ধেও প্রস্তুত তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানী পিয়ংইয়াংয়ে ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন কিম। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি এ তথ্য জানায়।
যদিও এর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে জো বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগকে উপেক্ষা করেছিল উত্তর কোরিয়া। তার এ বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়াকে একাধারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এবং বিশেষ করে সর্বাত্মক লড়াইয়ের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’
কিম বলেছেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও এর স্বতন্ত্র উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।’
বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নুতন প্রশাসনের সঙ্গে কাজের ‘উপযুক্ত কৌশল এবং কৌশলগত প্রতিরোধের’ বিস্তারিত পরিকল্পনার কথাও জানান।
বৈঠকে কিম বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সম্মানের সুরক্ষার্থে এবং স্বাধীনভাবে নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে, একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের বিশেষ করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।
‘‘উত্তর কোরিয়া যেকোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে তীব্র এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ মনযোগ দেবে।”
জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এটাই কিম জং উনের প্রথম মন্তব্য। কিমের এমন মন্তব্য নতুন করে দু-দেশের সঙ্গে আালোচনার পথ উন্মুক্ত হবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
খবরে বলা হয়, কিমের এ মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার আলোচনা শুরুর পথ উন্মুক্ত করতে পারে।
সম্প্রতি ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কিম প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া খাদ্য সংকটে রয়েছে।
এভাবে উত্তর কোরিয়ার দুরবস্থার কথা স্বীকার করে নেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। তা ছাড়া এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সংলাপের প্রস্তুতির বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই উত্তেজনায় ঠাসা। পরমাণু অস্ত্র তৈরিসহ নানা বিষয়ে বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে দেশটির অর্থনীতি ধসিয়ে দিয়েছে। পিয়ংইয়াংয়ে এ সপ্তাহে শুরু হওয়া বৈঠকে কিম তার দেশ খাদ্য সংকটে পড়ার কথা স্বীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কিমের সঙ্গে তার কথার লড়াই একদিকে যেমন যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। তেমনি দুই নেতা উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনার জন্য সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামে ঐতিহাসিক বৈঠক করেছিলেন। যদিও ওই দুই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গেও শুরুতেই উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গেছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণরে পর এক বিবৃতিতে বাইডেন উত্তর কোরিয়াকে বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’ বলে বর্ণনা করেন।
জবাবে উত্তর কোরিয়া থেকেও ক্ষুব্ধ মন্তব্য করা হয়। বলা হয়, বাইডেনের ওই মন্তব্য উত্তর কোরিয়ার প্রতি তাদের ‘বৈরী নীতি অব্যাহত থাকার’ কথাই বলছে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন তাদের উত্তর কোরিয়া নীতি নিয়ে একটি পার্যালোচনা বৈঠক শেষ করেছে। বৈঠক শেষে কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রর চূড়ান্ত লক্ষ্য কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্র মুক্ত
এরআগে সম্প্রতি মহামারি করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তর কোরিয়ার কৃষিক্ষেত্রে এবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশটির খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কিম জং উন।
কিম বলেছেন, এ বছর দেশের অর্থনীতির উন্নতি হলেও খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমি সবাইকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ