দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি সূচকে বরাবরের মতোই সবার ওপরে রয়েছে ভুটান। এ বছর ১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট স্কোর নিয়ে ২২তম অবস্থানে আছে বজ্রপাতের দেশটি। এবছর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এবারের স্কোর ২ দশমিক ০৬৮।
বৃহস্পতিবার(১৭ জুন) অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস(আইইপি) বৈশ্বিক শান্তি সূচক-২০২১ প্রকাশ করেছে।
প্রত্যেক বছর বিশ্বের স্বাধীন ১৬৩টি দেশ ও ভূখণ্ডের নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনের নিরাপত্তা, সুরক্ষা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে নেয়া পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি করে আইইপি। চলতি বছর সহিংসতার অনুপস্থিতি অথবা সহিংসতার ভয়কে ধরে তিনটি মানদণ্ড— সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা, চলমান সংঘাত এবং সামরিকায়নের ওপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করেছে আইইপি।
আইইপি প্রকাশিত বৈশ্বিক শান্তি সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৯১তম। এবারের স্কোর ২ দশমিক ০৬৮। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তালিকার ৯৭তম।
এবছর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই অঞ্চলে তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভুটান। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে থাকা দেশটির সূচকে অবস্থান ২২ তম। সূচকে ৮৫তম অবস্থান নিয়ে এ অঞ্চলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নেপাল। বাংলাদেশের পরে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা (৯৫), ভারত (১৩৫), পাকিস্তান (১৫০)। আফগানিস্তান সূচকের একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে।
শান্তির এই সূচকে গত বছরের তুলনায় একেবারে সাতটি লাফ দেওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কায় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটায় এর প্রভাব পড়েছে সূচকেও। গত বছরের তুলনায় ১৯ ধাপ অবনতি ঘটেছে দেশটির; এবারের সূচকে বৈশ্বিক অবস্থান ৯৫তম। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
অন্যদিকে, গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ উন্নতি ঘটেছে ভারতের। এ বছর বৈশ্বিক শান্তি সূচকে দেশটির অবস্থান ১৩৫তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে পাকিস্তানেও। এর ফলে গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ উন্নতি ঘটেছে দেশটির; উঠে এসেছে ১৫০তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের অবস্থান ষষ্ঠ।
টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় একেবারে তলানিতে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান (১৬৩তম)। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় সবার ওপরে আছে ভুটান। এরপরই আছে নেপাল। তবে দেশ দুটির বৈশ্বিক সূচকে অবস্থান যথাক্রমে ২২তম এবং ৮৫তম।
শান্তি সূচকে বলা হয়, এই অঞ্চলে সহিংসতার ভয়ের হার কম রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে। দেশ দুটির যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ মানুষ সহিংস অপরাধ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে এই হারটা রয়েছে ৫৩ শতাংশ।
সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, গত বছর বৈশ্বিক শান্তি সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ২ দশমিক ১০২ থাকলেও চলতি বছরে তা ২ দশমিক ০৬৮। একই সঙ্গে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি শান্তিপূর্ণ রয়েছে বাংলাদেশ।
২০২১ সালের এই সূচকে দেখা গেছে, বৈশ্বিক শান্তি গড়ে ০ দশমিক ০৭ শতাংশ অবনতি ঘটেছে। স্বল্প পরিমাণে হলেও গত ১৩ বছরের মধ্যে ৯ম বারের মতো বৈশ্বিক শান্তির অবনতি ঘটেছে বলে আইইপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় আগামী দশকে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
বৈশ্বিক শান্তির এই সূচকে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফিকা অঞ্চল সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ অঞ্চল রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ প্রত্যেক পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্তত তিনটির অবস্থান এই দুই অঞ্চলে।
ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ শীর্ষ অর্ধেক দেশের তালিকায় ইউরোপের বাইরের কোনও দেশই ঠাঁই পায়নি। আইইপির এই সূচক প্রথমবার প্রকাশের সময় থেকে বরাবরের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় শীর্ষে আছে আইসল্যান্ড (১ম)।
এরপরই আছে নিউজিল্যান্ড (২য়), ডেনমার্ক (৩য়), পর্তুগাল (৪র্থ) এবং স্লোভেনিয়া (৫ম)।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ