হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী সংবাদপত্র অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা পুলিশ। এতে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ পাঁচ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে
জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হংকংয়ে সংবাদপত্র কাযালয়ে এটাই প্রথম পুলিশি অভিযান বলে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, সাংবাদিকতার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী জব্দ করার পরোয়ানা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ওই অভিযান চালানো হয়। পুলিশের পাঁচশ সদস্য পত্রিকাটির বার্তাকক্ষে প্রবেশ করে।
তারা সাংবাদিকদের কম্পিউটার ও নোটবুক তল্লাশি করে। পাঁচ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে বার্তাকক্ষের কম্পিউটারগুলোর সামনেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বসে থাকতে দেখা যায়।
অ্যাপল ডেইলি চীনের নীতির কড়া সমালোচক। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের অফিসে পুলিশ পৌঁছে যায়। অফিসে ঢোকা-বেরনোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে নিষেধ করে দেয়া হয়।
অ্যাপল ডেইলি জানিয়েছে, তাদের প্রধান সম্পাদক রায়ান ল, সিইও চেউং কিমহাং, সিওও চাউ তাত-কুয়েন, ডেপুটি চিফ এডিটর চান পুইমান ও চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটর চি-ওয়াইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হংকং সরকার জানিয়েছে, জাতীয় সুরক্ষা বিভাগ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। তারা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চক্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ।
সরকার জানিয়েছে, চারজন পুরুষ ও একজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বয়স ৪৭ থেকে ৬৩-র মধ্যে। এর বাইরে সরকার আর কোনো তথ্য দেয়নি।
অ্যাপল ডেইলিতে পুলিশি অভিযান ফেসবুকে লাইভ দেখানো হয়। কীভাবে পুলিশ পুরো অফিস ঘিরে ফেলেছে, ভিতরে ঢুকছে, সেটা লাইভে দেখানো হয়।
একজন সাংবাদিক লাইভ কমেন্টারিতে জানিয়েছেন, ”সকাল সাতটা নাগাদ ট্রাকে করে পুলিশ আসে এবং ভবন ঘিরে ফেলে। এরপর তারা ট্রাকে একটার পর একটা বাক্স তুলতে শুরু করে।”
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, একটি মিডিয়া অফিস তারা তল্লাশি করেছে এবং কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ফোনসেট ও কম্পিউটার থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই পরোয়ানা জারি করা জয়। এই ঘটনার পর সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে সতর্কবার্তা আরও জোরেশোরে বাজতে শুরু করেছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৯ সাল থেকে এই ট্যাবলয়েডটি ডজনখানেকের বেশি প্রতিবেদন ছেপেছে, যা সম্ভবত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ করেছে। তবে সবশেষ নিবন্ধ কবে ছাপা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তারা।
সংবাদপত্রটির সদরদপ্তরের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ সুপারিনটেনডেন্ট লি কোয়াই-ওয়াহ বলেন, “এসব নিবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুবই সোজাসাপ্টা, উসকানিমূলক; চীন ও হংকংয়ের ওপর অবরোধ আরোপে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানানো।”
লি জানান, অ্যাপল ডেইলির সঙ্গে যুক্ত তিনটি কোম্পানির এক কোটি ৮০ লাখ হংকং ডলার (২৩ লাখ ২০ হাজার ডলার) জব্দ রাখা হয়েছে। এই অভিযান গোটা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হংকংয়ের বাইরে অবস্থানরত লাইয়ের পরামর্শক মার্ক সিমোন রয়টার্সকে বলেন, “অ্যাপল ডেইলির সম্পাদকীয় অংশের ওপর এটা সরাসরি হামলা। তারা পত্রিকাটির শীর্ষ সম্পাদকদের গ্রেপ্তার করেছে।”
অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে এটা পুলিশের দ্বিতীয় অভিযান। এর আগে গত বছর বিদেশি শক্তিদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে লাইকে গ্রেপ্তারের জন্য ২০০ পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
মিডিয়া মোগল জিমি লাইয়ের মালিকানাধীন অ্যাপল ডেইলি বেইজিংয়ের নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনার জন্য আলোচিত। এরই মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে তাকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।
চীনের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং বেআইনি সমাবেশে অংশ নেওয়ায় এখন তিনি কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
শুরু থেকেই সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত অ্যাপল ডেইলি। জিমি লাই চীনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শিশু অবস্থায় তাকে হংকংয়ে পাচার করা হয়। এর আগে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, তাকে কারাগারে রাখা হলেও তিনি ‘অর্থপূর্ণ ভাবে জীবন-যাপন করবেন’।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে (হংকং) এক ডলার নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। আমি এই জায়গার কারণে সব কিছু পেয়েছি। এখন যদি পরিশোধের সময় হয় তাহলে এটা আমার মুক্তি।’
২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের একটি বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে, চীনের ভাষায় যা ছিলো বেআইনি, অংশ নেওয়ার দায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ডিসেম্বর থেকে কারাভোগ করছেন লাই। নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা হওয়ায় তার জামিন হয়নি।
চীনের সবচেয়ে বেয়াড়া শহরটিকে একটি কর্তৃত্বপরায়ন শাসনের অধীনে আনতে এই জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বেইজিংয়ের প্রথম বড় পদক্ষেপ। বেইজিংয়ের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন যেকোন পদক্ষেপই এই আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব।
অ্যাপল ডেইলি হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের সমর্থন করে এসেছে এবং তাদের সমর্থনে খবর প্রকাশ করেছে। তাই প্রকাশকের পর পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল পুলিশ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ