বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে এবং ইতিমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এই দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আর তাই মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলতি মাসেই দেশজুড়ে বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে মোদি সরকার। তবে এর মাঝেই চরম আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে কোভাক্সিন টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত বায়োটেক। সংস্থাটির দাবি, প্রতি ডোজ টিকা ১৫০ টাকা মূল্যে সরকারকে সরবরাহ করতে চায় না তারা।
মঙ্গলবার সংস্থাটি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে দীর্ঘ সময় ধরে ডোজ প্রতি ১৫০ টাকা মূল্যে টিকা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারকে স্বল্পমূল্যে টিকা সরবরাহ করার কারণে বেসরকারি ক্ষেত্রে এর দাম অত্যাধিক বেড়ে যাচ্ছে।
ভারত বায়োটেক এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকারগুলোকে প্রতি ডোজ টিকা ৪০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি ডোজ টিকা ১২০০ টাকায় সরবরাহ করছে। আগামী ২১ জুন থেকে ভারত জুড়ে বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবে মোদি সরকার। সেই হিসেবে সংস্থাটির কাছ থেকে ভারত সরকার মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ কিনে নেবে, যা কোম্পানিকে ডোজ প্রতি ১৫০ টাকায় সরবরাহ করতে হবে। আর সেখানেই আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ব্যয়ের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বেসরকারি বাজারে বেশি দাম রাখা দরকার। ভারত বায়োটেক এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিনের কাঁচামাল আমদানি, ক্লিনিকাল ট্রায়াল এবং কোভাক্সিনের জন্য উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের জন্য ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছে।
সম্প্রতি ভারতের বাজারে করোনা টিকার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে বেসরকারি ক্ষেত্রে কোভ্যাক্সিনের দাম রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪১০ টাকা। সঙ্গে দিতে হবে ১৫০ টাকা জিএসটি। আর স্পষ্ট করে বললে- নিজস্ব বিনিয়োগে দেশে উৎপাদিত হলেও ভারতের বাজারে সবচেয়ে দামি টিকা হচ্ছে কোভ্যাক্সিন। তবে কার্যকারিতার দিক থেকে কোভিশিল্ডের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে এই টিকা।
ভারতে শনাক্তের হার ৩.২২%
ভারতে টানা নয় দিন ধরে ৫ শতাংশের নিচে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আজ বুধবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৬২ হাজার ২২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময় মারা গেছেন ২ হাজার ৫৪২ জন।
সবশেষ এ তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ১০৫। মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫৭৩। দেশটিতে আগের ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার) শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। রোববার এই হার ছিল ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।
ভারতে সোমবার ৬০ হাজার ৪৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ২ হাজার ৭২৬ জন। রোববার শনাক্ত হয় ৭০ হাজার ৪২১ জন। মারা যান ৩ হাজার ৯২১ জন। শনিবার শনাক্ত হয় ৮০ হাজার ৮৩৪ জন। মারা যান ৩ হাজার ৩০৩ জন। শুক্রবার শনাক্ত হয় ৮৪ হাজার ৩৩২ জন। মারা যান ৪ হাজার ২ জন। বৃহস্পতিবার ৯১ হাজার ৭০২ জন শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ৪০৩ জন। গত বুধবার শনাক্ত হয় ৯৪ হাজার ৫২ জন। মারা যান ৬ হাজার ১৪৮ জন।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকে। গত ৭ মে ভারতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য জানানো হয়।
গত ৪ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। গত ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়। গত ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়।
গত ৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ৯ জুন দেশটিতে রেকর্ড ছয় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভারতের দখলে। গত ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ২১ জুন থেকে এ লক্ষ্যে সব রাজ্য সরকারকে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহ করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৩৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ