মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী এখনো আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিভাবে সংস্কার করা যায় এনিয়ে চলছে জোর জল্পনা কল্পনা। এসবের মাঝেও প্রতিদিনকার নিয়মিত সংবাদের মতো মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক মোঃ ওসমান নামে ১২ বছর বয়সী এক ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পৌর এলাকার ফটিকা কামালপাড়া বায়তুল কোরআন মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপর বিকেলেই অভিযুক্ত মাদ্রাসার পরিচালক কামাল উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর বাবা মাদ্রাসা পরিচালকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। কামাল উদ্দিন হাটহাজারী পৌরসভার আলীপুর ৪নং ওয়ার্ডের মৃত তোফায়েল আহমদের ছেলে।
প্রবাসী আবুল কাশেমের ছেলে ওসমান বায়তুল কোরআন মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে তিন বছর ধরে লেখাপড়া করে আসছে। গতকাল সকালে মাদ্রাসায় ওসমানের সঙ্গে তার সহপাঠী এক ছাত্রের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মাদ্রাসার পরিচালক জানতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওসমানকে ধরে বেধড়ক পিটুনি দেন। এরপর সে কান্না করতে করতে বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ও থানা পুলিশ গিয়ে শিশুটির খবর নিয়েছে। ইউএনও বিকেলেই মাদ্রাসা থেকে কামাল উদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। শিশুর বাবা আবুল কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, যেভাবে ছেলেকে পেটানো হয়েছে তা অত্যন্ত নির্মম ও বর্বর।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এলাকার মানুষ মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। একটা সময়ে হয়তো এসব কুকর্মের কথা বাইরে প্রচার হতো না। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনসচেতনতা, সামাজিক প্রতিরোধ, আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ, দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা যাতে বিচার থেকে রেহাই পেতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা গেলে শিশুদের অনেকাংশে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। তবে এসবের বাইরেও কিছু ভাবতে হবে।
শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত আত্মবিকাশ। শিশুদের সামর্থ্য ও শক্তিগুলোর স্বাভাবিক ও সুষম বিকাশই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। শিশুদের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলো আবিষ্কার এবং তা পরিপূর্ণভাবে বিকাশ করতে শিক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো প্রচলিত ধারার শিক্ষা পদ্ধতির কঠোর অনুশাসন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকূল পরিবেশ শিশুর শিক্ষাজীবনকে বিপন্ন করতে পারে।
তাই শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের ক্ষেত্রে একটি গঠনমূলক, আনন্দঘন ও শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি, যা তাকে কৌতূহলী ও আজীবন শিক্ষানবিশ হিসাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে। মনে রাখতে হবে, যিনি হেফজখানায় পড়াচ্ছেন। তার প্রতি যেন ছাত্র এবং অভিভাবকরা বীতশ্রদ্ধ না হয়ে পড়েন।’
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৯১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ