করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ টিকা পেয়ে গেছেন। সেখানে সংক্রমণ আগের চেয়ে কমে আসছে। মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকেই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ধীরে ধীরে গতি ফিরে পাচ্ছে অর্থনীতি।
অন্যদিকে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় টিকা পাচ্ছে না এসব দেশ। পেলেও কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীও টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে কভিড-১৯ মহামারীর সমাপ্তি টানতে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিতরণের জন্য ৫০ কোটি ডোজ কভিড টিকা কেনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও অন্যান্য জি৭ নেতারা শীর্ষ সম্মেলনের জন্য যুক্তরাজ্যে জড়ো হয়েছেন। এখানেই তারা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কভিড-১৯ মহামারী সমাপ্তির রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন।
ব্লুমবার্গের দেখা এ-সম্পর্কিত একটি খসড়া নথিতে বলা হয়েছে, কর্নওয়ালে অনুষ্ঠেয় এ শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা অন্তত ১০০ কোটি ডোজ অতিরিক্ত টিকা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেবেন। এর মাধ্যমে আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিতরণ করতে মার্কিন সরকার চলতি বছর ২০ কোটি ডোজ এবং আগামী বছরের প্রথমার্ধে আরো ৩০ কোটি ডোজ টিকা কিনবে। এক্ষেত্রে ফাইজার-বায়োএনটেকের কভিড টিকা সরবরাহ করবে বাইডেন প্রশাসন। এ টিকাগুলো নিম্ন আয়ের ৯২টি দেশ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নে যাবে বলে জানান তিনি।
খসড়া নথি অনুযায়ী, জি৭ভুক্ত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যানবাহন থেকে শিগগিরই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরে সহায়তার প্রতিশ্রুতি রাখার পরিকল্পনা করেছে। নথিতে অন্তর্ভুক্ত অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের মধ্যে থেকে সাইবার আক্রমণ চালানোর জন্য রাশিয়াকে জবাবদিহি করার দাবি এবং সরবরাহ চেইনে বিশেষ করে পোশাক ও সৌরশিল্পে বাধ্যতামূলক শ্রম মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি।
এ নথিতে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে জিনজিয়াং অঞ্চলে সংখ্যালঘু উইঘুরদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে বেইজিং। খসড়া নথিতে কভিডজনিত বিধিনিষেধে আরো ছাড় এবং ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানকে সমর্থন করার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের সব দেশ করোনা ভাইরাসের টিকা সমানভাবে পাচ্ছে না। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই জি-৭ জোটের নেতাদের ওপর বাড়িত একটা চাপ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে টিকার বড় মজুদ রয়েছে। আবার গেল কয়েক সপ্তাহে সেখানে টিকার চাহিদাও কমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে যে টিকা দিচ্ছে ও জি-৭ জোটের নেতাদের কাছ থেকে যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে তাতে বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচি গতি পাবে বলে আশা বাইডেনের।
বাইডেন বলেন, আমরা কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য বা বাণিজ্যিক কারণে এই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা শুধুই মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য, মহামারি শেষ করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব, নৈতিকভাবে আমরা তার সবই করতে চাই।
কোভ্যাক্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এরই মধ্যে কোভ্যাক্স বেশির ভাগ টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের শেষের দিকে টিকার বড় চালানও পাওয়া যাবে। তবে আমরা যদি বর্তমানের পরিস্থিতি বিবেচনা না করি, তবে তাত্ক্ষণিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য কভিড টিকার অতিরিক্ত ডোজ সরবরাহ করবে মডার্না। এজন্য সংস্থাটি মার্কিন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে আগ্রহী। যদিও বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন এ টিকা নির্মাতা সংস্থাটি। চলতি বছর সংস্থাটি ১০০ কোটি ডোজ কভিড টিকা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে। এছাড়া উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায় আগামী বছর সংস্থাটি ৩০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে বলে আশা করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ//১৩৩৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ