রাশিব রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে ‘শিক্ষা কোন পণ্য নয়, শিক্ষা আমার অধিকার’ শ্লোগানটা আপনাদের চোখে না পড়ার কোন কারণ নেই। একটু তলিয়ে দেখা দরকার শিক্ষা আদতে অধিকার কি না। অধিকার হলে কেন এবং না হলে শ্লোগানটির যৌক্তিকতা কী? অনেকেই কথায় কথায় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাকে মৌলিক অধিকার বলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কিন্তু এ স্বীকৃতি দেয় নি। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের নাম “মৌলিক অধিকার”। ২৭ থেকে ৪৪ পর্যন্ত ১৮টি অনুচ্ছেদ বিশিষ্ট ভাগটি তন্নতন্ন করে খুঁজে আপনি একবার ‘শিক্ষা’ শব্দটির দেখা পাবেন। তবে অধিকার হিসেবে নিশ্চয়তা বিধানে নয়। ২৮ নং অনুচ্ছেদ যার শিরোনাম “ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য”, তার ৩ নং উপধারায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে বৈষম্যের শিকার না হওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি” শীর্ষক দ্বিতীয় ভাগে ১৫ নং অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাকে জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ বলা হয়েছে। একই ভাগের ১৭ নং অনুচ্ছেদ একই পদ্ধতির, গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার দিকনির্দেশ করলেও ৫০ বছরে কোন লক্ষ্যই অর্জিত হওয়া দূরে থাক, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার সেই “নির্ধারিত স্তর”ও অনির্ধারিত রয়েছে। কেউ কেউ বলতে পারেন দেশের সর্বশেষ শিক্ষানীতি বা শিক্ষানীতি ২০১০ বা কবীর চৌধুরী শিক্ষানীতি সেই স্তরকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত চিহ্নিত করেছে। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত যথেষ্ট কিনা সে বিতর্ক আপাতত তুলে রেখেও তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, শিক্ষানীতিটিও অবাস্তবায়িত রয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করে না। তবে কি শ্লোগানওয়ালারা ভুল বলেন? না, তারা শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে দাবি করেছেন। এ স্বীকৃতি সংবিধান দিলে কী হত? সংবিধানের ৪৪(১) অনুচ্ছেদ বলছে, “এই ভাগে (৩য় ভাগে) প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবৎ করিবার জন্য এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।” অর্থাৎ, কেউ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার পেত।
এবার আমরা আলাপ করতে পারি শিক্ষা মৌলিক অধিকার হবার যোগ্য কিনা সে বিষয়ে। মানবজাতি তার জন্মলগ্ন থেকে জীবনধারণ করতে গিয়ে যা কিছু নীতি কৌশল আয়ত্ব করেছে এবং ভবিষ্যতের পথরেখা আঁকতে শিখেছে তারই সমগ্র রূপকে শিক্ষা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই অখন্ড শিক্ষাকে আয়ত্ব করার সুবিধার্থে আমরা তাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছি। যেমন
বিস্তৃত প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের গতি-প্রকৃতি বোঝার জ্ঞানকে আমরা নাম দিয়েছি প্রকৃতিবিজ্ঞান, সমাজবদ্ধ হওয়ার পর থেকে সমাজের বিকাশ ও গতিধারা বোঝার জ্ঞানকে বলছি সমাজবিজ্ঞান আর ভাব বিনিময়ের ভাষা, প্রকৃতি ও সমাজের পারস্পারিক সম্পর্ক, সুষমা ও নন্দনতত্ত্বের আলোচনাকে স্থান দিয়েছি কলা হিসেবে। এসব মিলিয়েই আমাদের শিক্ষা। বোঝা যাচ্ছে শিক্ষা কোন একক ব্যক্তির উদ্ভাবন নয়। শত সহস্র বছরের সব মানুষের অর্জন কতিপয় লোক কুক্ষিগত করে যদি কেনাবেচা করতে চায়, তবে তা নিশ্চয় মেনে নেয়ার না। শিক্ষা হওয়া উচিত অপরাপর প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বায়ু, সৌরলোক বা সাগর-নদীর মত সবার জন্য অবারিত। আবার কোন মানুষ যদি প্রাকৃতিক ঘটনার কার্যকারণ না বোঝে, সে কূপমণ্ডুক হবে; যে সমাজের গতি বুঝবে না, সে পশ্চাৎগামী হবে; ভাষাজ্ঞানের অভাবে সে মতপ্রকাশে অক্ষম হবে; নন্দনতাত্ত্বিক বোধের অভাবে সুন্দরকে বাধাগ্রস্থ করবে। তাই শিক্ষাকে আমরা প্রতিটি মানুষের মানবিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করি। আবার সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে জনগণকে এসব বিষয় বোঝার উপযুক্ত করতে হয়। সেটুকু নিশ্চিত না করে কোন রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে না। তাই আমরা শিক্ষাকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে দাবি করি।
পুঁজিবাদের সাধারণ নিয়ম হল ব্যক্তি মালিকানা এবং মুনাফার উদ্দেশ্যে পণ্য বা সেবা উৎপাদন। পুঁজিবাদের উন্মেষকালে শিল্প কারখানা পরিচালনায় নব্য আবিষ্কৃত যন্ত্র ব্যবহার, মেরামত ও প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে রাষ্ট্রসমূহ নানা সীমাবদ্ধতাসমেত জনগণের শিক্ষার দায়িত্ব অনেকাংশে বহন করেছিল। কিন্তু পুঁজির বিকাশের সর্বোচ্চ স্তর বা সাম্রাজ্যবাদী যুগে এসে তার মুনাফার লালসা হয়েছে সর্বগ্রাসী। তাই নদী-পাহাড়-বন-খনির মত প্রাকৃতিক সম্পদকে যেমন সে ব্যক্তি মালিকের স্বার্থাধীন করেছে, তেমনি জ্ঞান এবং জ্ঞান সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেও সে করেছে পুঁজির পদানত। তাই শিক্ষা এখানে অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয় না। এখানে অপরাপর পণ্য ও সেবার মত শিক্ষাও বিক্রিযোগ্য সেবায় পরিণত করা হয়েছে এবং যারা শিক্ষা পেতে আগ্রহী, তাদেরকে পুঁজিপতি অথবা পুঁজিপতিদের রাষ্ট্রের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে।
শিক্ষা সংকোচন নীতির ধারাবাহিকাতায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরু থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মাত্রই উচ্চশিক্ষায় পৌঁছুতে পারেনি। মানুষের শিক্ষা নেয়ার আকাঙ্খা আছে, কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথেষ্ট আয়োজন নেই। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিপতিদের চোখ চকচক করে উঠল মুনাফার স্বপ্নে। কারণ তাদের এটাই তো চায়। চাহিদা আছে, যোগান নেই; সুতরাং উচ্চমূল্যে পণ্য বা সেবা বিক্রির উৎকৃষ্ট অবস্থা বিরাজ করছে। পুঁজিপতিদের সে স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে “যেহেতু দেশে উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ ও ব্যপক সম্প্রসারণ, সর্বসাধারণের জন্য উচ্চশিক্ষা সুলভকরণ এবং উহার মাধ্যমে দাতা জনগোষ্ঠী সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকরণ অত্যাবশ্যক এবং যেহেতু দেশের কতিপয় জনকল্যাণকামী ব্যক্তি, ব্যক্তি-গোষ্ঠী, দাতব্য ট্রাস্ট ও প্রতিষ্ঠান বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করিতে আগ্রহী”, তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ পাশের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হল। শুরুতেই এ ‘সুলভ’ উচ্চশিক্ষা মধ্যবিত্তদেরও নাগালের বাইরে থাকায় শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানেরা গ্রহণ করতেন। কালক্রমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধিতে ‘শিক্ষা’ নামক সেবা বিক্রেতাদের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেল, দেখা গেল টিউশন ফি’র বিবেচনায় বিভিন্ন স্তরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর জমিজমা
শিক্ষা সংকোচন নীতির ধারাবাহিকাতায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরু থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মাত্রই উচ্চশিক্ষায় পৌঁছুতে পারেনি। মানুষের শিক্ষা নেয়ার আকাঙ্খা আছে, কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথেষ্ট আয়োজন নেই।
বিক্রি করে অথবা ব্যাংক-এনজিও থেকে লোন নিয়ে টিউশন ফি’র যোগান দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ার ভীড়। ভর্তিচ্ছু অবস্থায় যাদের দেখা গেছে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ কত টাকায়, আর্কিটেকচার কত টাকায় বা ফার্মেসি কত টাকায় আর ভর্তির পর দেখা গেল ক্লাস টাইমের বাইরে প্রাইভেট টিউশনি অথবা ডেলিভারি ম্যান অথবা রাইড শেয়ারিংয়ের কাজ করে ঋণের কিস্তি শোধের ব্যবস্থা করতে। আর কাজের জোগাড় না হলে তো অনিশ্চয়তার অন্ধকার হাতড়ে ফেরা। চাহিদার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে সামর্থ্যও একটি। কিন্তু এই কৃত্তিম সামর্থ্য তৈরি করতে হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ২০২০ সালের এইচএসসি’র ফলাফলের দিকে চোখ বুলাই। প্রায় ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। অটোপাশ না হলেও প্রায় দশ লাখ হত। অথচ ২০২০ সালের জুলাই মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫২টি পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির মোট আসন সংখ্যা ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬২৯টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ‘কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্ত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৮ আসন বাদ দিলে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল, কৃষি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে আসন থাকে ৪৬ হাজার ৬০১টি। সুতরাং চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়ে নয় লাখ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তাই অভিভাবকেরা শেষ সম্বলটুকু শেষ করে দিয়েও যদি পারেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে ছুটছেন। এতে পুঁজিপতিরা একদিকে উচ্চমূল্যে শিক্ষা বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন, অপরদিকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমেও মুনাফা লোটার সুযোগ পাচ্ছেন।
পাকিস্তান আমলের কুখ্যাত শরীফ কমিশনের যে শিক্ষানীতি মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহরা জীবন দিয়ে রুখে দিয়েছিলেন, সে শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, ”যেমন দাম তেমন জিনিস – এই অর্থনৈতিক সত্যকে অন্যান্য ব্যাপারে যেমন, শিক্ষার ব্যাপারেও তেমন এড়ানো দুষ্কর।”
এখন আমরা কয়েকটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে পারি। প্রথমত, রাষ্ট্র সংবিধানের ‘মৌলিক অধিকার’ ভাগে বা অধ্যায়ে শিক্ষাকে সংযোজন না করে অধিকার হিসেবে শিক্ষার মানবিক ও গণতান্ত্রিক আবেদনকে অস্বীকার করেছে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ অনুসারে “উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ ও ব্যাপক সম্প্রসারণ” কাজে রাষ্ট্র তার নিজের দায়িত্বকে অস্বীকার করেছে। তৃতীয়ত, উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এবং ব্যাপক সম্প্রসারণের অজুহাতে ব্যক্তি পুঁজিপতিদের মানবজাতির অর্জিত জ্ঞানকে বিক্রি করে মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে দোকান, শিক্ষকেরা সেলস পারসন, অভিভাবকেরা ক্রেতা, শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত ভোক্তা এবং শিক্ষা পণ্য। পণ্যায়নের এই দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষার উপর করারোপ কোন বিস্ময়কর বিষয় নয়। পণ্য বা সেবার কেনাবেচায় তো করারোপ করা হয়েই থাকে। কিন্তু করারোপ অথবা কর রেয়াত থেকে বোঝা যায় রাষ্ট্রের আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি। সাধারণত রাষ্ট্র নতুন অথবা বর্ধিত করারোপ করে সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে যে পণ্যটির ভোগকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে চায় অথবা বিলাস দ্রব্য কিংবা ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে; যেমন বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি অথবা তামাকজাত পণ্য। আর কর রেয়াত দেয় সেসব পণ্যে, রাষ্ট্র যেগুলোর উৎপাদন ও বাজার সম্প্রসারণ চায় বা উৎসাহিত করতে চায়; যেমন দেশে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী অথবা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আমদানি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় করারোপ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিশ্চয় শিক্ষাকে বিলাস দ্রব্য অথবা ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে এর ভোক্তাদের নিরুৎসাহিত করতে চায়।
পাকিস্তান আমলের কুখ্যাত শরীফ কমিশনের যে শিক্ষানীতি মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহরা জীবন দিয়ে রুখে দিয়েছিলেন, সে শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, ”যেমন দাম তেমন জিনিস – এই অর্থনৈতিক সত্যকে অন্যান্য ব্যাপারে যেমন, শিক্ষার ব্যাপারেও তেমন এড়ানো দুষ্কর।” শিক্ষার উপর করারোপের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে অপরাপর পণ্যের সাথে শিক্ষাকে সমতুল করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানী প্রায়-ঔপনিবেশিক শাসকদের আমরা হটিয়েছিলাম দীর্ঘ গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় এক সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অথচ সেই মুক্তিসংগ্রামে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে বর্তমান শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা মিলে যায় সেদিনের শাসকদের সাথে!
লেখক: রাশিব রহমান, প্রাবন্ধিক
আপনার মতামত জানানঃ