যুক্তরাষ্ট্র ও য়ুরোপ জুড়ে সম্প্রতি সময়ে ইসরায়েল বিরোধী যে মনোভাব দানা বাঁধছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বাইডেন প্রশাসনের। এমনকি হোয়াইট হাউসে ইহুদি লিয়াজোঁ কর্মকর্তা এবং ইহুদি বিদ্বেষ বিষয়ে তদারকি ও প্রতিরোধের জন্য কোন দূত নেই। এ নিয়ে নাখোশ যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা। যদিও বাইডেন প্রশাসন ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গেছে, শিগগির এ দুটি পদে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিরোধিতার পালে হাওয়া লেগে গেছে। সম্পর্ক নাজুক হচ্ছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে ইহুদি বিদ্বেষ বাড়ছে। এমন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পদে প্রতিনিধি না থাকাটা বেশ বেমানান লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের কাছে। ইহুদি বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা বুঝে নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে ইহুদি লিয়াজোঁ কর্মকর্তা এবং ইহুদি বিদ্বেষ প্রতিরোধ ও তদারকির জন্য কাউকে নিয়োগ দেয়নি।
এটা যে ইসরায়েলিদের চোখে এড়িয়ে গেছে তাও না। তাদের প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েল সফর নিয়ে গত ৪ জুন আয়োজিত ব্রিফিংয়ে। সেখানে ইহুদি সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা অনুপস্থিত ছিল। যা সচারাচর হয়নি কখনও। এ ধরনের ব্রিফিংয়ে সাধারণ ইহুদিদের বিভিন্ন গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কিন্তু সেদিন ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান গ্রুপগুলোর প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং ইহুদি নারীদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত ছিলেন, যা অবাক করার মতো ঘটনা। এতে স্পষ্ট যে, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের সময়ে লিয়াজোঁ কর্মকর্তা না থাকলেও, ইহুদি বিদ্বেষ বিষয়ে তদারকির জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়োগের জন্য সময় নিয়েছিল দুই বছর। যদিও এর আগের প্রশাসনগুলো দায়িত্ব নেয়ার শুরুর দিকে এ পদগুলোতে কাউকে না কাউকে নিয়োগ দিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসনেরো ক্ষমতায় আসার পরে এই দুই পদ নিয়ে ছিল উদাসীনতা। তবে এবার এ পদগুলোতে দ্রুত কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি উঠেছে ইহুদিদের দিক থেকে। দাবির পক্ষের একজন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা কারা ম্যাকডোনাল্ডকে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছেন, আমি জানি বর্তমানে ইহুদি বিদ্বেষ প্রতিরোধ ও তদারকির জন্য দূত এবং হোয়াইট হাউসে ইহুদি লিয়াজোঁ কর্মকর্তা নেই। এটা কীভাবে সম্ভব?
তবে হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিদের সুখবরই দিতে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে বাইডেন প্রশাসন ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, লিয়াজোঁ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে শিগগির ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে দেরীর কারণে হিসেবে মহামারি করোনো ভাইরাস সামলানো এবং বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে বাইডেন প্রশাসনের ব্যস্ততার কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া জানা যায়, ইহুদি বিদ্বেষ প্রতিরোধ ও তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ দেবোরাহ লিপস্ট্যাড। আর লিয়াজোঁ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন অ্যান্ড্রু দোলবার্গ, ডেন সেইগাল, সামান্থা জোসেফ, শেলি গ্রিনস্প্যান, গ্যাব্রিয়েল বারনেট এবং অ্যালেক্স গোল্ডম্যান। যাদের প্রায় প্রত্যেকেই ইহুদিদের মধ্যে বাইডেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করেছেন।
এদিকে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র বলেন, ঘরে-বাইরে বিশ্বের সর্বত্র ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এ ছাড়া জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।
তবে ইহুদি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন টুইটারে ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে ইসরায়েল, পশ্চিম তীর এবং গাজার বিষয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে বলার পাশাপাশি ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি প্রত্যেকের সমান নিরাপত্তা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা প্রাপ্য বলে জানান। পশ্চিম তীর এবং গাজায় সহিংসতা নিয়ে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান নেতাদের সঙ্গেও তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানান ব্লিঙ্কেন। তিনি টুইটারে লেখেন, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবার যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্য ইসরায়েলের সাথে তাদের সম্পর্ক কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে সেটা খুব শীঘ্রই জানা যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ