ব্রিটেন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০২১ সালের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকার একদম তলানিতে রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের শহরগুলি।
এবার বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় একেবারে তলানিতে রয়েছে সিরিয়ার দামেস্ক। ১৪০টি শহরের তালিকায় এর অবস্থান ১৪০তম। ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস। ১৩৮তম অবস্থানে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি। ১৩৭তম বাংলাদেশের ঢাকা। এ ছাড়া ১৩৬তম অবস্থানে আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, ১৩৫তম অবস্থানে লিবিয়ার ত্রিপোলি ও ১৩৪তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি।
নতুন এ জরিপ অনুসারে ২০২১ সালে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানের ওসাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, বসবাসযোগ্য শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের দুটি, জাপানের দুটি, অস্ট্রেলিয়ার চারটি ও সুইজাল্যান্ডের দুটি রয়েছে।
বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থান রয়েছে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ও জাপানের টোকিও শহর। একই নম্বর পেয়েছে এই দুই শহর। ষষ্ঠ অবস্থানে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ। সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সুইজারল্যানন্ডের জুরিখ, জেনেভা এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন।
ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ‘অকল্যান্ড শীর্ষে উঠে এসেছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য। যেভাবে চটজলদি ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করে দেশের প্রশাসন এতদিন নাগরিক জীবন সচল রেখেছে, তাতে তাদের স্কোর অনেকটাই বেড়েছে।’ ঠিক একই কাজ ইউরোপের দেশগুলো সফলভাবে করতে পারেনি। তাই তারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকেরা।
গত কয়েক বছর ধরে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ভিয়েনা। কিন্তু তারা এবার ১২ ধাপ নিচে নেমেছে। যে ১০টি শহর সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে, তার মধ্যে আটটিই ইউরোপের কোনও না কোনও শহর। এই পতনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জার্মানির হামবুর্গ। ৩৪ সিঁড়ি বেয়ে ৪৭তম স্থানে নেমে এসেছে শহরটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বসবাসযোগ্য শহরের ক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ২০১৮ সাল থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এই তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু এবার শীর্ষ দশ শহরের মধ্যে স্থানই পায়নি ভিয়েনা। ২০১৯ সালে ভিয়েনার সঙ্গে একই পয়েন্টে নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। সেই মেলবোর্ন এবার আট নম্বরে নেমেছে।
মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ‘লকডাউন’ থাকা শহরের তথ্য সংগ্রহ করতে না পারায় ২০২০ সালের তালিকা করার কাজ বাতিল করে ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। করোনা মহামারির কারণে এই তালিকায় এসেছে বেশ পরিবর্তন।
ইকোনমিস্ট গত বছর বসবাসযোগ্য শহরের যে র্যাঙ্কিং করেছিল, তা বাতিল করা হয়েছিল। এ কারণে সর্বশেষ র্যাঙ্কিং প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। সেই তালিকা অনুসারে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। বসবাসযোগ্যতার দিক দিয়ে ওই বছর ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৮তম। এবার ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। সেই হিসাব অনুসারে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে ঢাকার।
বসবাসের যোগ্যতার দিক থেকে শহরগুলোর মোট পাঁচটি বিষয়কে সূচকে আমলে নেওয়া হয়। এর জন্য মোট ১০০ নম্বর ঠিক করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা পেয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ নম্বর। এর মধ্যে শহরের স্থিতিশীলতার দিক থেকে ৫৫, স্বাস্থ্যসেবায় ১৬ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০ দশমিক ৮, শিক্ষায় ৩৩ দশমিক ৩ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ৮ নম্বর পেয়েছে ঢাকা।
২০১৯ সালে ঢাকা পেয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ নম্বর। এর মধ্যে শহরের স্থিতিশীলতার দিক থেকে ৫৫, স্বাস্থ্যসেবায় ২৯ দশমিক ২, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৪০ দশমিক ৫, শিক্ষায় ৪১ দশমিক ৭ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ২ নম্বর পেয়েছিল ঢাকা।
২০১৯ সালের জরিপেও বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরগুলোর প্রথমেই সিরিয়ার দামেস্ক। তালিকার পরবর্তী শহরগুলো হলো- আমাদের ঢাকা, নাইজেরিয়ার লাগোস, পাকিস্তানের করাচি, পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোর্স বি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় বহুমুখী যুদ্ধ চলছে। বিমান হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, এমনকি রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে সেখানে। ফলে বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় দামেস্কের এক নম্বরে থাকা অস্বাভাবিক নয়; কিন্তু আমাদের স্বপ্নছোঁয়া উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী ঢাকা, বছরের পর বছর বসবাস-অযোগ্য শহরের তালিকার তলানিতে থাকা জাতির গভীর বেদনা আর শঙ্কা তৈরি করে।
তারা বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে যেসব সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তার সব এখানে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো সমস্যা এতটাই প্রকট যে, সেগুলোর সমাধান আদৌ সম্ভব কি না তা গভীর ভাবনার বিষয়। দেশের রাজধানী শহরে বসবাসকারী নাগরিকদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার কথা, তার ধারে-কাছেও নেই অভাগা ঢাকাবাসী। তারপরও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ স্রোতের মতো ঢুকছে এ শহরের পেটে। বিদ্যমান বাসিন্দাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে আরো কিছু মানুষ, যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা আর প্রকট হয়ে উঠছে পুরনো সমস্যা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ