
চীনকে চাপে রাখতে নানা তৎপরতা চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পথেই হাঁটলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্প আমলে ৩১ চীনা প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এবার সে তালিকায় যোগ হচ্ছে আরও ২৮ প্রতিষ্ঠান।
পর্যবেক্ষকদের অভিমত, বেইজিংয়ের ওপর চাপ বজায় রেখেই বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাকি বিশ্বের সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বাইডেন এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে এ আদেশে বাইডেন স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প আমলের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে ৩১টি চীনা প্রতিষ্ঠান। মার্কিন নাগরিকরা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে পারবেন না মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান চীনের প্রতিরক্ষা ও নজরদারি প্রযুক্তি খাতের সরঞ্জাম সরবরাহ করছে কিংবা সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। ওই নিষেধাজ্ঞাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ আরো কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের নাম যোগ করতে চলেছে। বাইডেনের নতুন আদেশ অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল চীনের ৩১টি প্রতিষ্ঠান। এখন সেটা বেড়ে হবে ৫৯টি। এর মধ্যে চীনের বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েও রয়েছে। বাইডেনের নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ আগামী ২ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর জোরদার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে এই তালিকা হালনাগাদ করা হবে এবং আগামী দিনগুলোতে নিষেধাজ্ঞার তালিকা আরও দীর্ঘ হবে বলে আমরা আশা করছি।’
বাইডেনের নতুন নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, চীনের যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন না।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তারা সকলেই কোনো না কোনো ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিশেষত, উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে।
নিষেধাজ্ঞার অর্থ, কোনো মার্কিন সংস্থা ওই সংস্থাগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। ওই সংস্থাগুলি আমেরিকায় কোনো রকম ব্যবসা করতে পারবে না।
এদিকে হুয়াওয়ে জানায়, ২০১৯ সালে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে তারা ব্যবসায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছে। আবার যুক্তরাজ্যও ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হুয়াওয়েকে বাদ দেবে বলে জানিয়েছে।
বাইডেনের এ পর্যালোচনার খবর এমন সময় এলো, যখন দুটি চীনা প্রতিষ্ঠান আদালতে ট্রাম্প আমলের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে শরণাপন্ন হয়েছে। বাইডেন জানান, এবার এমনভাবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পাকাপোক্ত করা হবে, যেন এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগই না থাকে।
ট্রাম্পের আমলে চীনের যে ৩১টি কম্পানির শেয়ার কেনার ওপর মার্কিন নাগরিকদের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চায়না মোবাইল, চায়না টেলিকম, ভিডিও সার্ভেইল্যান্স প্রতিষ্ঠান হিকভিশন ও চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিআরসিসি) মতো বড় বড় টেলিকম, নির্মাণ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
এশিয়ায় ক্রমাগত প্রভাব বিস্তার করতে থাকা চীনকে ঠেকাতে হোয়াইট হাউসের নেওয়া একাধিক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা। এ পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলে চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বাণিজ্য ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে দুই দেশ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। দেশ দুটি পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। এরই প্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প চীনের নামকরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ ৩১টি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষাধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
অনেকেই মনে করেছিলেন, জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খানিকটা উন্নত করবেন। কিন্তু বাস্তবে বাইডেন প্রশাসন সে পথে হাঁটছে না। চীনের ৫৯টি সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি সে কথাই স্পষ্ট করল।
চীন জানিয়েছে, সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমেরিকা ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে চীনকেও কঠিন পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে। একই সঙ্গে চীন জানিয়েছে, আমেরিকা যে কাজ করেছে, তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের পরিপন্থী।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পদক্ষেপের প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তিনি বলেন, ‘চীন ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে থাকবে এবং তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় আইনগত সহায়তা দেবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ