মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে খবর প্রচারের ঘটনায় দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার(২ জুন) দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে মাইয়েক শহরের একটি সামরিক আদালত তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। খবর আল জাজিরার
কারাদণ্ড পাওয়া দুই সাংবাদিক হলেন- ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মায় (ডিভিবি) কর্মরত অং কিয়াও এবং মিজিমা নিউজের ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার জাও জাও।
ওই দুই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানোর অভিযোগ এনে উপনিবেশিক আমলের একটি আইনে তাদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানো ঠেকাতে উপনিবেশিক আমলের একটি আইন সংশোধন করেছে জান্তা সরকার।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার উৎখাত করে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে নেয়। এর প্রতিবাদে দেশটিতে প্রবল বিক্ষোভ ও নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। আর তা ঠেকাতে কঠোর বলপ্রয়োগের নীতি গ্রহণ করে সামরিক সরকার। চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৮৪১ জন নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভের খবর প্রচার করায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও আটক করা হয়েছে।
অং কিয়াও তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন। বিক্ষোভের খবর প্রচার করায় এর আগে ডিভিবির আরও দুই সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়নসহ মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নিয়েছে জান্তা সরকার। এর মধ্যে ডিভিবি এবং মিজিমাও রয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বুধবার অং কিয়াও এর মুক্তির দাবি জানিয়ে ডিভিবি’র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সামরিক জান্তা অবৈধভাবে অং কিয়াওকে আটক করেছে। এটা বার্মার জান্তা সরকারের স্পষ্ট জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’
মিজিমার বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর জাও জাওসহ তাদের পাঁচ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমটি বলেছেন, ‘মিজিমা জোরালোভাবে বিশ্বাস করে সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোনও অপরাধ নয়। আর সেকারণে মিজিমাসহ সব সংবাদমাধ্যমকেই মিয়ানমারে স্বাধীনভাবে কাজ চালানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।’
পর্যবেক্ষক সংগঠন রিপোর্টিং আসিয়ানের হিসাবে, গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮৭ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে ৫১ জন এখনো বন্দি। বন্দিদের মধ্যে দুই মার্কিনিসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকও রয়েছেন।
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বন্দি সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে মিয়ানমার জান্তার ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশটির সার্বিক পরিস্থিতিতে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে মিয়ানমারে। টানা সামরিক সহিংসতার মুখে নিজেদের রক্ষা করতে বিভিন্ন গোষ্ঠী অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে।
জান্তা সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে গড়ে ওঠা ছায়া সরকার (ঐক্য সরকার) ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) মুখপাত্র সাসা তেমনই সতর্কতা দিলেন।
সাসা বলেন, মিয়ানমারের মানুষের এখন আর কোনো উপায় নেই। নির্বিচারে জান্তা বাহিনীর অভিযান, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হত্যা মানুষকে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটি মাত্র শুরু। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কোনো গ্রামে যদি একটি পুরুষ মানুষও থাকে, তবু খুনিদের সামনে তারা মাথা নত করবে না। তার মানে পুরো দেশ এখন গৃহযুদ্ধের দিকেই হাঁটছে। ঐক্য সরকারও জান্তার বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছে নিজস্ব সেনাবাহিনী।
মিয়ানমার সীমান্ত এলাকাগুলোতে অনেকগুলো নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের জন্য দশকের পর দশক ধরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়ে আসছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের বেশ কটি গোষ্ঠী জান্তাবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দিয়েছে। ফলে দেশটির যেসব এলাকা আগে শান্তিপূর্ণ ছিল, সেখানে এখন লড়াই চলছে।
পশ্চিম কায়াহ রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে পুরোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেনি আর্মি ও নতুন গঠিত কারেনি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেপিডিএফ) মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহে এ লড়াইয়ে হাজার হাজার মানুষ ওই অঞ্চল ছেড়ে পালিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউকে কেপিডিএফ জানায়, গত সোমবার সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে বেসামরিক যোদ্ধাদের ওপর বোমা ফেলে ও গুলি চালায়।
বাহিনীটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা হালকা অস্ত্র দিয়ে তাদের হামলা চালিয়েছি, আর তারা মারণাস্ত্র দিয়ে আমাদের জবাব দিয়েছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ