আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী এবং ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় দোভাষী হিসেবে কাজ করা তিন হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে দ্রুততার সঙ্গে ব্রিটেনে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। তারা স্থায়ীভাবে বিটেনে বসবাসের অনুমতি পাবেন। আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার এবং তালেবান যোদ্ধাদের ক্ষমতা দখলের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যেই এই পরিকল্পনা ঘোষণা করা হলো।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী এবং ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন শত শত আফগান নাগরিক। বিদেশি সেনা সদস্যরা আফগানিস্তান ছেড়ে গেলে ‘শত্রুদের’ সহযোগী হিসেবে কাজ করা এসব আফগান নাগরিক তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন। আর তাই বিদেশি সেনাদের দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তালেবানের কবল থেকে তাদেরকে বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, বিদেশি সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থায় দোভাষী হিসেবে কাজ করা এসব ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ ৩ হাজারেরও বেশি আফগান নাগরিককে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ জন ইতোমধ্যেই দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে এটাই ‘একমাত্র উপায়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিদেশি সেনাদের অনুপস্থিতির সুযোগে তালেবানের প্রতিশোধমূলক হামলার শিকার হতে পারেন, এমন ব্যক্তিদেরকেই আফগানিস্তান থেকে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বিষয়টিকে ‘নৈতিক বাধ্যবাধকতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।
অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী এই যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর আফগানিস্তান থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে একমত হয়ে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জো বাইডেন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
এদিকে আফগানিস্তানের কাপিসা প্রদেশের তাগাব জেলায় একটি বিয়ের আসরে মর্টার হামলা হয়েছে। এতে অন্তত ছয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় তালেবান এবং সরকারি বাহিনী পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছিই আফগান সরকারি বাহিনী ও তালেবানদের মধ্যে লড়াই চলছিল। প্রাদেশিক পুলিশের এক মুখপাত্র শায়েক শোরেশ এ ঘটনার জন্য তালেবানদের দোষারোপ করেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো চারজন। তবে কাবুলের এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিহত অন্তত ১০ জন এবং আহত কমপক্ষে ১৮।
এক তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই মর্টার তারা ফায়ার করেননি। সরকারি বাহিনী এটি ফায়ার করেছিল। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি আফগানিস্তানে সহিংসতা বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ