চলতি বছরে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন এবং পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নিপীড়নের এ তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়কালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হন ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ২০৮ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন। গত নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। এতে আরও বলা হয়, এ বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময়কালে নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলা, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, নজরদারি ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
আসকের মানবাধিকার প্রতিবেদন
আসকের প্রতিবেদনে প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা, খাগড়াছড়িতে চাকমা নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতন, সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী কর্তৃক স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ বিভিন্ন ঘটনার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ নারী। এছাড়া স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ১২ নারী। এ সময়ের মধ্যে ১১ গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। এ সময়কালে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী।
আসকের প্রতিবেদন বলছে, গত নয় মাসে শিশু নির্যাতন ও হত্যা সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়কালে ১ হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয় এবং হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু।
এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। গত নয় মাসে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ২০৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে বিজয় টিভি’র ধামরাই প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময়কালে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৩০ জন।
এ সময়ে ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ৩২ জন এবং শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ১৮ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ২০ জন।
আপনার মতামত জানানঃ