খুলনা মহনগরীতে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভারতফেরত কোয়ারেন্টিনে থাকা তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সদর থানায় আজ সোমবার(১৭ মে) খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) এএসআই মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই তরুণী। মামলার পর এএসআই মোখলেছুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেএমপি ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আনোয়ার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত মোখলেছুর রহমান খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এর কোর্ট অতিরিক্ত উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত। তিনি খুলনার পিটিআই (প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) এ কোয়ারেন্টিন সেন্টারে গত ১ মে থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ভারতে করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। তবে ভারতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে ফিরতে পারছেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে দেশে করতে হবে করোনা পরীক্ষা। নেগেটিভ হলেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৪ দিন থাকতে হবে কোয়ারেন্টিনে।
ওই তরুণী গত ৪ মে ভারত থেকে এসে খুলনা পিটিআই সেন্টারে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই তরুণীর বাড়ি নগরের খানজাহান আলী থানা এলাকায়। ৪ মে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। তাকে খুলনা পিটিআই সেন্টারে ১৪ দিনের প্রাতষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টিন চলাকালে এএসআই মোখলেছুরের সঙ্গে তার পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে ১৪ মে মোখলেছুর তাকে ধর্ষণ করেন।
খুলনা পিটিআইয়ের তত্ত্বাবধায়ক এবং কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দা ফেরদৌসী বেগম জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ভারত থেকে আসা নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য পিটিআইয়ের মেয়েদের হোস্টেলের দ্বিতীয় তলা ব্যবহার করছে জেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত ১৪ জন নারীকে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ১০ জন কোয়ারেন্টিনে শেষ করে চলে গেছেন। তবে ধর্ষণের ওই অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
খুলনার অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেন জানান, মোখলেছুরকে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে পাঠানো হয়েছে আদালতে।
কেএমপির ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই তরুণীকে খুলনা মেডিক্যালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণ মামলা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওই পুলিশ সদস্য খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় বাসা ভাড়া নিয়ে ৯ মাস বসবাস করেছেন বলে ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ করা হয়।
অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যের নাম অলোক কুমার ঘোষ (২৯)। তার বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাঁকা গ্রামে। তিনি বর্তমানে খুলনার শিরোমণি এলাকায় অবস্থিত ৩ এপিবিএনের নায়েক হিসেবে কর্মরত।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নায়েক অলোক কুমার ঘোষ মেহেরপুর জেলায় কর্মরত অবস্থায় এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অলোক ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করবেন, এমন আশ্বাসে ছয় বছরের এক সন্তানের মাকে তার স্বামীকে তালাক দেওয়ায় উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রীর ভুয়া পরিচয়ে খুলনার শিরোমণি, যশোরের বেনাপোল ও চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা গুলশানপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে ৯ মাস তারা বসবাস করেন। সম্প্রতি ওই নারী বিয়ের জন্য চাপ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং তা মামলা পর্যন্ত গড়ায়।
এ ঘটনায় ওই নারী দামুড়হুদা মডেল থানায় গত শনিবার ধর্ষণ মামলা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর এসবের সবকটাই ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা।
তারা বলেন, পুলিশে ঢোকার পর স্বাভাবিক একজনের ভেতরেও আশ্চর্য এক পরিবর্তন আসে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত ভেবে তারা যা ইচ্ছা তা করার মানসিকতা নিয়ে দাপটের সাথে চলতে থাকেন। ফলে ঘর থেকে বাহির কেউ তাদের কুৎসিত হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসার হয়েও ক্ষমতার দাপটে এসব ধর্ষণ অপকর্ম আমাদের সমাজের এক চরম দুর্দশার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন আরও অসংখ্য অভিযোগ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ