চট্টগ্রামবাসীর অন্যতম একটি প্রাণের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছিলো বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। অন্যতম জাতীয় গণমাধ্যম হিসেবে বিটিভির জনপ্রিয়তা সবসময়ই প্রশ্নাতীত। সেই হিসেবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের শিল্পী সমাজও নিজেদের একটি ঠিকানা পেয়ে গর্বিত হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে ক্ষোভের অন্ত নেই।
অভিযোগ খোদ মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে। সকল নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জিএম তাঁর পছন্দের লোকজনকে দিয়েই অনুষ্ঠান সাজানোসহ সবগুলো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন – এমন অভিযোগ করেছেন তালিকাভুক্ত সিনিয়র শিল্পীরাই। এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিনিয়র সঙ্গীত পরিচালক মুন্না ফারুক বলেন – “সিটিভিতে দুর্নীতি নতুন খবর নয়, ভূতপূর্ব মহাপরিচালক মনোজ সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে আমিই মামলা করেছিলাম দুদকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁকে সরিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোনও বিচারই হয়নি। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন, কিন্তু সেই মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা এখনও দাপটের সাথেই স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন।”
একই কথা বললেন আরেক সিনিয়র সঙ্গীত শিল্পী নাজমুল আবেদিন চৌধুরী। তিনি আরও যোগ করে বলেন -“বর্তমান জিএম নিতাই চন্দ্র ভট্টাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর কারণে সিনিয়র শিল্পীরা সিটিভির অঙ্গন থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে।”
যোগাযোগ করা হয় আরেক সিনিয়র সঙ্গীত পরিচালক শংকর দে’র সাথে। রিপোর্টার পরিচয় পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন তিনি। ধরা গলায় বললেন -“দাদা, চট্টগ্রামের নিবেদিতপ্রাণ শিল্পীদের পক্ষে কলম ধরবার মতো কেউ নেই ভেবেছিলাম। আপনাকে পেয়ে আশ্বস্ত হলাম, সব কথা বলতে চাই প্রাণ খুলে। শংকর দে বর্ণনা দেন একে একে সব দুর্নীতির ফিরিস্তি। কীভাবে জুনিয়র ও আনকোরা শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান সাজানো হয়, কীসের মানদণ্ডে শিল্পী বাছাই করা হয়, কীভাবে ও কাদের মাধ্যমে প্রোগ্রাম শিডিউল সেটিং করা হয় সব জানিয়ে তিনি সবশেষে বললেন -“বর্তমান জিএম নিতাই চন্দ্র ভট্টাচার্য আমাদের শিল্পী সমাজকে নিজের পছন্দমত শিল্পী দিয়ে অনুষ্ঠানমালা সাজান। ঈদুল ফিতরের অনুষ্ঠানে তিনি অনেক সিনিয়র শিল্পীদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দমত শিল্পীদের নির্বাচিত করেছেন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি একজন প্রথম শ্রেণির তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার পরও অপদস্থ হয়েছি। আমরা এর প্রতিকার চাই।”
চট্টগ্রাম বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন তাহের বলেন – “সিটিভি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ চ্যানেল হওয়ার পথে। অথচ এর অনুষ্ঠানের মান ক্রমশঃ নিম্নমুখী।” এর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি জোর দিয়ে বলেন -“জিএম স্যারের স্বেচ্ছাচারিতাই এর জন্য দায়ী। তিনি কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের লোকজনকে সুযোগ করে দিচ্ছেন আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে। যার সর্বশেষ নজির হচ্ছে চলমান ঈদুল ফিতরের অনুষ্ঠান। প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রাধান্য দিয়েছেন নিজের পছন্দের শিল্পীদের।”
বিটিভির যন্ত্রী ও সঙ্গীত পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে আছেন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। তিনিও করলেন অভিন্ন অভিযোগ। তাঁরও প্রশ্ন – কেন জিএম সাহেব প্রতিষ্ঠিত গুণী শিল্পীদের এভাবে অবজ্ঞা উপেক্ষা করে সিটিভির অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
আরও কয়েকজন সিনিয়র জুনিয়র শিল্পীর সাথে কথা বলার পর জিএম নিতাই চন্দ্র ভট্টাচার্যকে মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। কয়েকবার নক করার পরও তিনি ধরেননি। অবশেষে প্রশাসনিক লেভেলে জিএমের জুনিয়র একজনকে ফোনে পাওয়া গেলে অভিযোগগুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করছিলেন বিনয়ের সাথে। তারপরও জোরাজুরি করলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজি হলেন কথা বলতে। তাঁর কথার সারমর্ম হলো – যার যে ডিপার্টমেন্টই থাক্ না কেন, এখানে জিএম স্যারের কথা কিংবা ইচ্ছার বাইরে কেউই কিছু করতে পারেন না।
সবার অভিযোগ যাচাই করার মাধ্যমে আরও অনেক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র নিয়ে। এসব তথ্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
এসডব্লিউ/নসদ/২১৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ