ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সমকামী সহ গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে। এর মধ্যে গে, লেসবিয়ান, রূপান্তরকামীসহ একাধিক যৌনবৃত্তির মানুষ আছেন। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের বহু দেশে সমকামীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। তাদের মানবাধিকার রক্ষিত হয় না।
এবার যুক্তরাজ্যে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার মানুষের অধিকার নিয়ে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের এলজিবিটিকিউদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করা ইক্যুয়াল রাইটস কোয়ালিশনকে (ইআরসি) দেয়া অঙ্গীকার অনুযায়ী যুক্তরাজ্য সরকার সামনের বছর ওই সম্মেলনের আয়োজন করছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সামনের বছরের জুনে লন্ডনে দুই দিনব্যাপী ‘সেইফ টু বি মি’ নামে ওই সম্মেলন চলবে। অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত কর্মকর্তা, অ্যাকটিভিস্ট ও নীতিনির্ধারকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
‘সেইফ টু বি মি’ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক এমপি নিক হারবার্টের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এলজিবিটিকিউদের অধিকার বিষয়ে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিশেষ দূত।
হারবার্ট বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো এলজিবিটিকিউদের অধিকার নিয়ে এত বড় আয়োজন হতে যাচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের সদস্যরাও অংশ নেবেন। আশা করি, এলজিবিটিকিউদের অধিকারে প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে এই আয়োজন সবাইকে উৎসাহিত করবে।’
যুক্তরাজ্যের নারী ও সমতাবিষয়ক মন্ত্রী লিজ ট্রুজ বলেন, ‘এলজিবিটি মানুষেরা যেসব সংস্কারের মুখোমুখি এখনও হচ্ছেন, সেসব নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হবে। আমাদের আন্তর্জাতিক বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে ওই সব সংস্কার মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে।
‘সব মানুষকে তাদের স্বতন্ত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও মেধা দিয়েই কেবল মূল্যায়ন করা উচিত। এ বার্তা যেন পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।’
এদিকে ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের প্রশাসন সমকামিতাকে ব্যাধি বলে মনে করে। সমকামীদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হয় সেখানে। একই পরিস্থিতি হাঙ্গেরিতে। সেখানেও প্রশাসন সমকামীদের অধিকার রক্ষা করে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক রেসোলিউশন বা প্রস্তাবে এই প্রতিটি বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। ইইউ-র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউনিয়নের ২৭টি দেশে সমকামী সহ গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। তাদের উপর কোনো রকম আক্রমণ করা যাবে না। বৈষম্যমূলক আচরণও করা যাবে না। আর সকলের মতো এই গোষ্ঠীর মানুষেরাও স্বাভাবিক এবং স্বচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করতে পারবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪৯২ জন আইনপ্রণয়নকারী এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ১৪১ জন বিপক্ষে। ৪৬ জন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। অর্থাৎ, বিপুল ভোটে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
পোল্যান্ড অবশ্য এরমধ্যেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সেখানকার প্রশাসনের বক্তব্য, তাদের দেশ রক্ষণশীল। সেখানে সমাজ কীভাবে চলবে, তা দেখার এবং বোঝার দায়িত্ব সার্বভৌম সরকারের। নীতি প্রণয়নও সে ভাবেই হয়। স্বাধীন সরকারের নীতিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
এখানেই উদ্বেগ। ইউরোপের বহু মানবাধিকার গোষ্ঠীর বক্তব্য, ইইউ যে প্রস্তাব নিয়েছে, তা যুগান্তকারী। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ হবে তো! বহু সিদ্ধান্তই খাতায় থেকে যায়। বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় না। এক্ষেত্রেও সেই একই বিষয় ঘটবে না তো!
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ