যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কোনও নভোযান মঙ্গলগ্রহে সফলভাবে অবতরণ করাতে সক্ষম হলো চীন। প্রথমবারের মতো মঙ্গল গ্রহ স্পর্শ করেছে চীনা রোভার জুরং। চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর বরাত দিয়ে চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া এই তথ্য জানিয়েছে।
সিনহুয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অবতরণের ঘোষণা দিয়ে বলে, ‘চীন প্রথমবারের মতো মঙ্গল গ্রহে তাদের পদচিহ্ন রেখেছে, যা আমাদের দেশের মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
চীনের নভোযান মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করায় সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা যায়, আজ শনিবার (১৫ মে) চীনের স্থানীয় সময় সকালে মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করে ছয় চাকার ওই বিশেষ নভোযানটি। অন্তত ৯০টি মঙ্গল দিবসে সেখানে ঘুরে বেড়াবে মঙ্গলযানটি। এই দীর্ঘ সময়ে নানা নমুনা সংগ্রহ করবে সেটি। খতিয়ে দেখবে মঙ্গলপৃষ্ঠের গঠন।
চীনের মঙ্গল মিশনটির নাম ‘তিয়ানওয়েন-১’ (কোয়েশ্চেনস টু হেভেন)। চীনের বৃহত্তম মহাকাশ রকেট ‘লং মার্চ ৫’ হেইনানের একটি দ্বীপ থেকে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ওই নভোযান যাত্রা শুরু করে।
৭ মাস যাত্রার পর সাড়ে ৫ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এটি মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করবে। এ মিশনে একটি মার্স অরবিটার, একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার রয়েছে, যা মঙ্গলের মাটি পরীক্ষা করবে।
হার্ভার্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের নভোচারী জোনাথন ম্যাকডোয়েল বলেন, ‘চীনের প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে আমি খুব বেশি আশাবাদী নই। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যা করে দেখিয়েছে, চীন বড়জোর সেটাই করে দেখাতে পারে।’
এদিকে, মঙ্গলের কক্ষপথ ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের জন্য আগ্রহের কেন্দ্র পরিণত হয়েছে। সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি নভোযান উৎক্ষেপণ করেছে, যা মঙ্গলের কক্ষপথ পরিক্রমণ করবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয়টিই এখন সবার চোখে পড়ছে। মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রাসীভাবে কাজ করছে চীন।
মহাকাশ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ ইতিমধ্যে দেখেছে বিশ্ব। এবারে চীন তাদের সামরিক নেতৃত্বের কর্মসূচি হিসেবে কোটি কোটি ডলার এ খাতে ব্যয় করেছে।
স্বিশ্লেষক চেন ল্যান বলেন, মঙ্গল দ্বৈরথে চীনের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি অর্ধ শতাব্দী ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের পরিস্থিতি বদলে দেবে। চীন ইতিমধ্যে চাঁদে দুটি রোভার পাঠিয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় রোভারটি সফল অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র নয় বার মঙ্গলে অবতরণে সফল হয়েছে। এর আগে ১৯৭১ সালে রাশিয়া মঙ্গলগ্রহে সফলভাবে নভোযান অবতরণ করেছিল। কিন্তু মঙ্গলপৃষ্ঠে যাওয়ার পরেই তা বিকল হয়ে যায়
আপনার মতামত জানানঃ