চিকিৎসা বা অন্যান্য প্রয়োজনে ভারতে যাওয়া শত শত বাংলাদেশি নাগরিক কী অবস্থায় আছেন এখন? কীভাবে কাটাচ্ছেন ঈদ? জানা যায়, ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা স্থলপথে দেশে ফিরতে চাইছেন। তবে তাদের অন্তত ঈদের ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
গত মাসে ভারতে মহামারির প্রকোপ ভীষণভাবে বাড়ার পর ২৫শে এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় পরবর্তী দু’সপ্তাহের জন্য ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত বন্ধ রাখা হবে, পরে যে সময়সীমা দু’দফায় আরও বাড়ানো হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্ত নে’য়ার আগের এক মাসেই বাংলাদেশ থেকে ভিসা নিয়ে হাজার দশেক নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
কেমন আছেন বাংলাদেশিরা?
এই মুহূর্তে শুধু পশ্চিমবঙ্গে কমবেশি ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগী। বাকিরা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী।
প্রায় ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা মাথায় নিয়ে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা এনওসির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাদেরকে। অপরদিকে আর্থিক অবস্থাও দিন দিন খারাপ হওয়ায় আধপেটা খেয়ে অসুস্থ রোগী নিয়ে পথেই রাত কাটাতে হচ্ছে কাউকে কাউকে।
এরই মধ্যে মাছির মতো একদল দালাল চক্রও কাজ করছে। ফলে লাইনে দাঁড়ানো বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা।
তাদের মতে, কেন এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত? আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, এর দায় কার? গেট পাস না পাওয়া অবধি কোথায় রাত কাটাবো? ভারতে যে করোনা পরিস্থিতি ভালো নয় বলে সীমান্ত বন্ধ হলো এখন তাদের করোনা হলে কে দেখবে?
যেভাবে দেশে আনা হবে তাদের
দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আগামী ১৬ই মে (রবিবার) থেকে আবার তাদের মিশনগুলো নাগরিকদের ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা অনাপত্তিপত্র) দিতে শুরু করবে।
তিনি বলেন, তবে বেনাপোল ও আগরতলা সীমান্তে চাপ খুব বেড়ে যাওয়ায় আমরা বুধবার নতুন তিনটে ল্যান্ড রুট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে গুলো হল গেদে-দর্শনা, দিনাজপুরের হিলি আর মালদার কাছে সোনামসজিদ।
যেহেতু বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর যাত্রীদের ভিড়ে যশোরের কোয়ারেন্টিন ফেসিলিটিগুলো এখন সব ভর্তি, তাই আমরা চাইব এই নতুন তিনটি ল্যান্ড রুটই এখন বেশি ব্যবহার করা হোক।
ফলে যারা এখন দেশে ফিরতে চাইছেন তাদের আমরা রানাঘাটের কাছে গেদে-দর্শনা, হিলি কিংবা সোনামসজিদ রুট ব্যবহার করার জন্যই পরামর্শ দেবো, বলে জানিয়েছেন হাই কমিশনার ইমরান।
দেশে ফেরানো নিয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা
সরকার যা অনুমান করেছিল, দেখা যায় কার্যক্ষেত্রে তার চেয়ে অনেক বেশি নাগরিক দেশে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দেশে ফিরে অন্তত দু’সপ্তাহ তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, এটা জেনেও!
‘এনওসি’ না-থাকায় পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে গত ২৬শে এপ্রিল দেশে ঢুকতে পারেননি কয়েকশো বাংলাদেশি, তারা সেদিন বিকেলে সেখানে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতেও শুরু করে দেন।
যেহেতু তারা মূলত চিকিৎসার প্রয়োজনেই এসেছিলেন এবং এই সব কাজ মিটতে বেশ সময়ও লাগে, তাই আমাদের ধারণা ছিল বড়জোর হয়তো হাজারখানেক নাগরিক এখন দেশে ফিরতে চাইবেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এর মধ্যেই আমরা এনওসি-র জন্য তিন হাজারেরও বেশি আবেদন পেয়েছি, এবং এখনও আবেদন জমা পড়েই চলেছে।
কিন্তু পেট্রাপোল সীমান্তের ওপারে যশোরের যে হোটেলগুলোতে ভারত-ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেগুলো সব ভর্তি হয়ে যাওয়ায় কলকাতার বাংলাদেশ মিশন সাময়িকভাবে এনওসি জারি করা বন্ধ করে দেয়।
তারপরেও শত শত বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় গত কয়েকদিনে কলকাতায় উপদূতাবাসের সামনে ভিড় করেছেন। অনেকে হোটেল বা গেস্ট হাউস থেকে চেক-আউট করে বাক্স-প্যাঁটরা পর্যন্ত নিয়ে চলে এসেছিলেন।
এনআরসি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি
তবে আপাতত ঈদের ছুটি মেটার আগে নতুন করে আর কাউকে এনআরসি দে’য়া সম্ভব না। অথচ এর মধ্যে যশোরে অনেকের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশন আরও খবর পেয়েছে, কলকাতার বাজারে ‘জাল এনওসি’ পর্যন্ত কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ফিরতে মরিয়া কোনও কোনও বাংলাদেশি না কি চার হাজার টাকা বা তারও বেশি অর্থ দিয়ে এক একটা জাল নথি কিনছেন!
এরপরই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এনওসি-র ‘হার্ড কপি’ কারও হাতে আর দেওয়া হবে না।
যারা ফেরার অনুমতি পাবেন তাদের নাম-পরিচয়ের তালিকা সরাসরি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সেই তালিকার নামের সঙ্গে পাসপোর্ট মিলিয়ে দেখেই ইমিগ্রেশন বিভাগ নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে।
তবে গোটা প্রক্রিয়াটা আবার শুরু হওয়ার জন্য এখনও আরও কম করে তিন-চারদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
সেখানে সবারই বাড়ি ফেরার তাড়া। কিন্তু উপায় নেই। ডেপুটি হাইকমিশনের ভিসা প্রদানকারী বসিরউদ্দিন বলেন, স্বীকার করছি সমস্যার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশিরা। আমরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সে কারণে রোজার মধ্যেও কম লোকবল নিয়ে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত কাজ করেছি। খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে সমস্যা।
তবে গাদাগাদি এই ভিড়ের মধ্যে যেভাবে আবেদন জমা পড়ছে, তাতে বাংলাদেশ মুখোমুখি হতে পারে ভয়াবহ পরিস্থিতির। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি চার জনের মধ্যে একজন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। গোটা ভারতে ১ মিনিটে ৫ জনের শরীরে ধরা পড়ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ফলে কী ঘটতে চলেছে, তা সহজেই অনুমেয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ