রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আপাতত গাছ না কাটতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১১ মে) বিচারপতি মামনুন রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা নিয়ে আদালত অবমাননার মামলার শুনানির জন্য আগামী ২০ মে (বৃহস্পতিবার) দিন ধার্য করেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের উদ্দেশে আদালত বলেন, ২০ তারিখে আবেদনটি শুনানির জন্য আসবে। আপনি মৌখিকভাবে বলে দেবেন এ সময় পর্যন্ত যেন গাছ না কাটে। আপাতত যেন গাছ না কাটে।
আদালত অবমাননার অভিযোগে গত রোববার দুই আইনজীবীর পক্ষে মনজিল মোরসেদ আবেদনটি করেন। যা আজ শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
গত রোববার উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মেনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার অভিযোগ তুলে এক সচিবসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। সেই সঙ্গে উদ্যানে গাছ কাটা ও রেস্তোরাঁ বা দোকান নির্মাণের কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
যাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়েছে, তারা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আখতার ও প্রধান স্থপতি মীর মনজুর রহমান।
এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা বন্ধে রোববার (০৯ মে) হাইকোর্টে রিট করেছেন ছয় সংগঠন ও এক ব্যক্তি।
ওই ৬ সংগঠন ও এক ব্যক্তির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এ রিট দায়ের করেন। রিটকারী সংগঠন ও ব্যক্তি হলেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা বন্ধ করে রেস্টুরেন্ট বা দোকান স্থাপনের কার্যক্রম বাতিল চেয়ে সচিবসহ তিন কর্মকর্তার বরাবর ৬ মে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আবেদনকারীদের আইনজীবীর ভাষ্যমতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালে রিট করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৬ জুলাই হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন। রায়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের স্থান সংরক্ষণ করার নির্দেশনা ছিল। রায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বিদ্যমান সব ধরনের স্থাপনা অপসারণ করে চিহ্নিত স্থানগুলোতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও বিবেচনাপ্রসূত দৃষ্টিনন্দন ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ করতে বলা হয়ে। অন্য সব স্থাপনা অবিলম্বে অপসারণ করতেও বলা হয়। গাছ কেটে উদ্যানের মধ্যে ব্যবসায়িক স্বার্থে রেস্টুরেন্ট বা দোকান নির্মাণ শুধু আদালতের রায়ই নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেরও পরিপন্থী। মূলত এসব দিক বিবেচনায় আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার সবুজের একটি বড় অংশই দখল করে আছে উদ্যান ও কিছু পার্ক। কংক্রিটের এই শহরে সাতটির মতো বড় উদ্যান রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের আয়তন ২০৮ একর, চন্দ্রিমা উদ্যান ৭৪ একর, রমনা পার্ক ৬৯ একর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ৬৮ একর, ওসমানী উদ্যানের আয়তন ২৩ একর, বাহাদুর শাহ পার্ক প্রায় ২৪ একর ও বলধা গার্ডেন ৩ দশমিক ৩৮ একর।
এ ছাড়া গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক, লেকপার্ক, বারিধারার লেকভিউ পার্কসহ আরও কিছু পার্ক রয়েছে ঢাকাজুড়ে। রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চিড়িয়াখানা এলাকা, সংসদ ভবন এলাকা ও ধানমন্ডির মতো কিছু সবুজ এলাকা। এ স্থানগুলোর বেশ কয়েকটিতে রয়েছে কাঠবিড়ালিসহ নানা প্রাণী।
কিন্তু ক্রমেই এসব এলাকাও চলে যাচ্ছে কংক্রিটের দখলে। তার সর্বশেষ উদাহরণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ছোট-বড় অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আরও অনেক গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে কংক্রিটের পরিমাণ।
তারা বলেন, যদিও সরকার বিভিন্ন সময় বলেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কংক্রিটের এই প্রকল্পের বিরোধিতা করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করা। তারা প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘অপ্রয়োজনীয় গাছ’ কেটে ফেলেছে। বিপরীতে আরও বেশি গাছ লাগানো হবে।
পরিবেশবিদ, স্থপতি ও আইনজীবীরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বড় পরিসরে অবকাঠামো নির্মাণ উদ্যানের ‘উদ্যান চরিত্র’ নষ্ট করবে, যা ‘উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০২০’-এর লঙ্ঘন।
এ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী, ‘এই আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ