‘তারা মাথায় গুলি করেছিল, কিন্তু তারা তো জানে না বিপ্লব থাকে হৃদয়ে’
এমনি সাহসী লাইন লিখেছিলেন কবি। মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুঁড়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে কবি খাত থি এই লাইন লিখেছিলেন। এ লাইনই কাল হলো তার। মিয়ানমার জান্তা সরকারের নিকট এই লাইন শক্তিশালী বোমার চেয়েও বড় আঘাত করলে কবিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবশেষে সেই জান্তা সরকারের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়ে কবি মারা যান। তবে মানবধিকারকর্মীরা বলছেন, কবিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
৪৫ বছর বয়সী খাত থির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। গতকাল রোববার (৯ মে) তার পরিবারের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাতে মৃত্যু হয়েছে এই কবির। মৃত্যুর পর তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার তিনি ও তার স্বামীকে অস্ত্রধারী সেনা সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন কবি খাতের স্ত্রী চাও সু।
তিনি বলেন, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খাতকেও করা হয়। তারা জানিয়েছিল; তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি আর ফিরলেন না। তার মৃতদেহ ফিরে এলো।
চাও সু আরও বলেন, আমাকে তারা সকালে ফোন দিয়ে মনিয়ায়োতে হাসপাতালে দেখা করতে বলেছিল। আমি ভেবেছিলাম, তার হাত ভাঙা কিংবা অন্যকিছু। কিন্তু আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছাই, তখন তার লাশ মর্গে। তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গ তুলে নেওয়া হয়েছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় শহর শোয়েবো থেকে কবিসহ ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। তাদের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দিলেও হত্যা করা হয় ওই কবিকে। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রভূমি বলা হয় এই শহরকে। কবিতার মধ্য দিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের কারণেই খাত থির মৃত্যু হয়েছে। পেশাগতভাবে তিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন। কিন্তু কবিতায় মনোযোগ দিতে ২০১২ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।
তবে, তার মৃত্যু নিয়ে জান্তা সরকারের মুখপাত্রের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তার ফেসবুক পেজের তথ্যানুসারে খেত থির বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। তিনি লিখেছেন, ‘তারা মাথায় গুলি করে, কিন্তু তারা জানে না বিপ্লব থাকে হৃদয়ে। ’
অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পর তিনি লেখেন, আমি কোনো নায়ক হতে চাই না, আমি শহীদ হতে চাই। আমি ভীরু হতে চাই না, বোকা হতে চাই না।
গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় বসে সামরিক শাসক। ওই সময় এনএলডি নেত্রী অং সান সু চিসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকেই সামরিক জান্তার দমন পীড়ন চলছে।
একদিকে মিয়ানমারে চলছে সেনা বাহিনীর দমন পীড়ন; অন্যদিকে চলছে বিক্ষুব্ধদের আন্দোলন। এ পর্যন্ত অন্ততত ৭৭৬ জনকে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কবি খাতের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে দেশটিতে সেনাবিরোধী তিনজন কবির মৃত্যু হলো।
রয়টার্স জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান বিক্ষোভে খাত থিসহ কমপক্ষে তিনজন কবি নিহত হয়েছেন। গত মার্চের শুরুর দিকে খাত থি’র বন্ধু কবি ঝাঁ উইনকে (৩৯) মনুইয়ার রাস্তায় বিক্ষোভ চলাকালে গুলি করে হত্যা করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ