অনলাইনে বই বিক্রির দেশীয় বিতর্কিত প্ল্যাটফর্ম রকমারি ডট কম। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় লেখক-পাঠক-গ্রাহকদের অনেক ধরনের অভিযোগ থাকলেও রকমারি কর্তৃপক্ষ অভিযোগগুলো কখনো আমলে নেয়নি এবং কোন ধরনের ব্যাখ্যাও দেয়নি । সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে মূখ্য হিসাবে বলা হচ্ছে- ই-কমার্স সাইটটি ‘বিতর্কিত বই’ প্রচার করছে, যা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে। অতিসম্প্রতি রকমারি ডট কম-এর সেরা লেখক তালিকার কয়েকজনকে দেশে উগ্রবাদি ও জঙ্গিবাদি কর্মতৎপরতার সাথে যুক্ত বলে সরকার শনাক্ত করেছে, যাদের লেখা বই জঙ্গিবাদ প্রসারে ভূমিকা রাখছে বলে সরকারের গোয়েন্দ সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য আছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে রকমারি’র আলো ছড়ানো সেইসব বর্ষসেরা লেখকদের ইতোমধ্যে আটকও করা হয়েছে।
আজ সকালে রকমারি’র ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে এ বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছে। যেখানে ওয়েবসাইটে ‘বিতর্কিত বই’ প্রদর্শন, প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা ও সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকাসহ নানা বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বক্তব্যে রকমারি যেভাবে বলেছে, “হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ে কাজ করতে গেলে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক”।
আবার তারা অভিযোগকারীদের উদ্দেশে বলেছে, “ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, যাদের বই বিক্রির পরিমাণ সন্তোষজনক নয় তাদের বই নিয়ে কার্যক্রম কম হলে তখন তারা রকমারির প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়াতে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেন। সাম্প্রতিক সময়ে রকমারি বিষয়ে একের পর এক অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় তাই নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির ভূমিকাই প্রতীয়মান হচ্ছে।”
নীচে রকমারি ডট কম এর বক্তব্যটি পাঠকদের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ প্রকাশ করা হল-
সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু আলোচনার প্রেক্ষিতে রকমারি ডট কম এর বিরুদ্ধে আসা বিতর্কিত বই প্রচার নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
১। বিতর্কিত লেখকের বই/ বিতর্কিত বই ওয়েবসাইটে প্রদর্শন-
রকমারি ডট কম একটি সেবা ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমরা মূলত সারা দেশে বই এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কাজ করি। আমরা নিজেরা কোন বই প্রকাশ করিনা, প্রকাশকদের প্রকাশ করা বই বিপণন করি। যেকোন বই, যেটা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ না, সে ধরনের বই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন এবং বিক্রি করা হয়। এর বাইরে কোন বই এর বিষয়বস্তু যদি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য কিংবা কোন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, সে ধরনের বইগুলো বাদ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করা হয়।
এখানে বলে রাখা ভালো, যেকোন বই এর কন্টেন্ট এর দায় শুধুমাত্র লেখক এর। লেখক- প্রকাশক এর ব্যক্তিগত মতাদর্শ কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে স্বভাবতই আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। বইয়ের বিষয়বস্তু যদি রাষ্ট্রীয় বিধান এর সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ হয় অথবা ধর্মীয় বিষয়বস্তুতে আঘাত হানে অথবা কোন লেখক আইন পরিপন্থী কাজে অভিযুক্ত হন, তখন আমরা সেই বই বা সেই লেখকের বইয়ের বিপণন বন্ধ রাখি। সাম্প্রতিক সময়ে যে সব লেখক এরকম অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা তাঁদের বই বিপণন বন্ধ করে দিয়েছি।
রকমারি ডট কম বই বিক্রির একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম মাত্র। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে ফেসবুক বা ইউটিউবের কথা। ফেসবুক বা ইউটিউবে একাউন্ট খোলার পর যে কেউ কন্টেন্ট আপলোড করতে পারে। সেই কন্টেন্ট আপত্তিকর হলে পরবর্তীতে ফেসবুক/ ইউটিউবে রিপোর্ট করলে তারা সেটা সরিয়ে দেয়। আমাদের ব্যবস্থাও সেরকমই।
আমাদের সাইটে প্রকাশকদের নিজস্ব একাউন্ট তৈরি করে দেয়া আছে। যেখান থেকে তাঁরা নিজেরাই সাধারণত বই আপলোড করে থাকেন। রকমারি ডট কমের ওয়েবসাইটে দেশি-বিদেশী মিলিয়ে ১০ হাজার এর বেশি প্রকাশক এবং ৫০ হাজারের বেশি লেখকের ২ লক্ষাধিক টাইটেলের বই আছে। সব প্রকাশক-লেখক সম্পর্কে একজন একজন করে খোঁজ নিয়ে কিংবা লক্ষ লক্ষ বই নিজেরা পড়ে তারপর আমাদের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন কখনোই সম্ভব না।
সেক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত নীতিমালার অধীনে কোন বই বিষয়ে অভিযোগ চলে আসলে এবং আমাদের অবগত করা হলে আমরা তখন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আমাদের ওয়েবসাইটে সেই বই প্রদর্শন বন্ধ রাখি। ফলে রকমারির ডট কম এর সুবিশাল ক্রেতাসাধারণ, পাঠকদের প্রতি বিনীত এবং আন্তরিক অনুরোধ, এ ধরনের কোন আপত্তিকর বই এর বিষয় নজরে আসলে অনুগ্রহ করে তা admin@rokomari.com এ ইমেইল করে দেবেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ।
২। রকমারির নিজস্ব মতাদর্শ-
রকমারি ডট কম -এর একটিই আদর্শ, তা হচ্ছে গ্রাহকদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা এবং কোন অর্ডারে কোন ত্রুটি হলে তা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা। এর বাইরে আমাদের কোন ধরনের কোন রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় মতাদর্শ নেই। রকমারি ডট কম এর সার্ভিস গ্রহণ করার অধিকার বাংলাদেশের প্রতিটি বইপ্রেমী নাগরিকের।
উল্লেখ্য যে রকমারি ডট কম অন্যরকম গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যার মূল স্লোগানই হলো- “অন্যরকম বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের যে মাতৃভূমি, সেই মাতৃভূমিকে ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে তার সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পারস্পারিক সহমর্মিতা, সহযোগীতা বজায় রেখে একসাথে মিলে আমরা সবাই কাজ করলেই অন্যরকম বাংলাদেশ গড়ার সেই স্বপ্ন সফল হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
৩। রকমারি বেস্টসেলার তালিকা এবং বিজ্ঞাপন নীতিমালা-
রকমারি ডট কম বেস্টসেলার বই নির্বাচিত হয় বই এর বিক্রি অনুসরণ করে এবং সেটি পুরোপুরি অটোমেটিক এলগরিদম এর মাধ্যমে করা হয়। তাই ম্যানুয়ালি কোন পরিবর্তন/পরিমার্জনের সুযোগ নেই। যে বই পাঠকরা সবচেয়ে বেশি কিনে থাকেন সে অনুযায়ীই রকমারি বেস্ট সেলারের ক্রম এবং তালিকা প্রকাশ করা হয়।
জনপ্রিয় বিভিন্ন ক্যাটেগরি যেমন উপন্যাস, গল্প, আত্মউন্নয়ন, ইসলামী, রাজনীতি ইত্যাদি ৫০টির বেশি ক্যাটেগরিতে আমরা আলাদা আলাদা বই এবং লেখকের বেস্ট সেলার তালিকা তৈরি করি এবং সবগুলো ক্যাটেগরি মিলিয়ে একটি সাধারণ তালিকাও প্রকাশ করা হয় পাঠকদের চাহিদার ভিত্তিতে। রকমারি ডট কম প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের ওয়েবসাইটে থাকা সকল বইকে আমরা বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করেই কাজ করে আসছি।
আমরা মূলত পাঠক চাহিদার উপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকি যার একটি বড় অংশ থাকে AI (Artificial intelligence) নির্ভর। মূলত ফেসবুক পিক্সেল এবং গুগল ট্রাকিং কোড এর ওপর নির্ভর করে এই পদ্ধতি কাজ করে। আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটররা যে বইগুলো ভিজিট করেন পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই পিক্সেল এর মাধ্যমে অটোমেটিক সেই বইগুলির বিজ্ঞাপনই মূলত তারা দেখেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আমরা বিষয়ভিত্তিক প্রচারণা চালাই যেমন কোন বিখ্যাত লেখকের জন্ম/ মৃত্যু দিবসে তাঁকে নিয়ে আয়োজন, ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইমেলা, মার্চ এবং আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বইমেলা, রমজানে ইসলামী বইমেলা ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে রকমারি বইমেলায় যেসকল বই বেস্টসেলার হয় সেগুলো নিয়ে সারা বছরই প্রচারণা চালানো হয়। সুতরাং রকমারি ডট কম সব বইকে এক ক্যাটেগরিতে ফেলে বই এর বিজ্ঞাপন প্রদান করে এই ধারণা ভুল এবং অযৌক্তিক।
৪। রকমারি ডট কমের সার্চ রেজাল্ট-
রকমারি ডট কমের সার্চ নিয়েও আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি। সার্চ করার ক্ষেত্রে যেসব বই বেশি বিক্রি হয়েছে সেগুলোতে কিছু প্রায়োরিটি দেয়া হয়। সার্চ করার ক্ষেত্রে “বই” ও “বাংলা” এ দুটো টার্ম যদি থাকতো তাহলে আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের সর্বাধিক বিক্রিত বইগুলো চলে আসতো। এই দুই টার্মের সাথে অন্য যেকোন টার্ম লিখলেই কাছাকাছি রেজাল্ট আসতো। এই টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো আমাদের নজরে আসা মাত্রই সমাধান করে ফেলা হয়েছে।
সর্বশেষ একটি বিষয়-
রকমারি ডট কম চাইলেও সকল লেখক, সকল প্রকাশকের বই নিয়ে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়না। বিক্রির পরিমাণ, লেখকের পরিচিতি এই বিষয়গুলো না চাইলেও আমাদের বিজ্ঞাপনী খরচ ঠিক করার সময় মাথায় রাখতে হয়। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, যাদের বই বিক্রির পরিমাণ সন্তোষজনক নয় তাদের বই নিয়ে কার্যক্রম কম হলে তখন তাঁরা রকমারির প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়াতে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেন। সাম্প্রতিক সময়ে রকমারি বিষয়ে একের পর এক অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় তাই নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির ভূমিকাই প্রতীয়মান হচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, বিদ্বেষ না ছড়িয়ে ভুলগুলো ধরিয়ে দিন। যে কোনো সেবাপ্রদানকারি প্রতিষ্ঠান নিয়েই সমালোচনা হয়, কারণ প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ে কাজ করতে গেলে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেকোন গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করি।
অন্যদিকে ঘৃণার সংস্কৃতি লালন করে আদতে কারোই লাভ হচ্ছে না। বিগত প্রায় এক দশক ধরে রকমারি বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে বই পৌঁছে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বই হাতে পেয়েছে রকমারির মাধ্যমে। বিদেশে বসেই অনেকে পেয়েছেন বাংলা বইয়ের স্বাদ। উঠতি হাজারো লেখক-প্রকাশকদের ভরসার জায়গা হয়েছে রকমারি। আমরা সবাই মিলে বইকে ছড়িয়ে দিতে চাই, এটাই আমাদের শক্তি জায়গা। দেশীয় কোম্পানি হয়ে আমরা চরম প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে আছি এই শক্তির কারণেই। ফলে ক্রমাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলে রকমারি একা না, দেশের কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং বিদ্বেষ না ছড়িয়ে কীভাবে বইয়ের পাঠক তৈরি করা যায় এ নিয়ে একসাথে কাজ করলে সামগ্রিক ভাবে লাভবান হবে সবাই।
রকমারি ডট কম আপনাদের প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই আমরা চেয়েছি ৫৬ হাজার বর্গমাইলে বই ছড়িয়ে দিতে কাজ করতে। আন্তরিক থাকার পরেও আমাদের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকে বিভিন্ন সময়। আমরা চেষ্টা করি দ্রুততার সাথে সেগুলো সমাধান করতে। আমরা বিশ্বাস করি, এতদিন আপনাদের যে ভালোবাসা এবং সহযোগীতা আমরা পেয়ে এসেছি তা অব্যাহত থাকলে আপনাদের সেবায় আমরা আরো ভালোভাবে কাজ করে যেতে পারবো।
আমাদের সাথেই থাকুন।
যদি আমরা রাখি ভালো, তবেই থাকবে ভালো বাংলাদেশ…
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ