দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন আনসার-আল-ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়। সম্প্রতি সংগঠনটির কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংগঠনটি থেকে কালো পতাকা ও তলোয়ার হাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিলো! এই অভিযোগে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তার নাম আবু সাকিব। সে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য।
গতকাল বুধবার (৫ মে) সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে শেরে বাংলা নগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হামলায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ‘উগ্রবাদী বক্তা’ আলী হাসান ওসামাকে রাজবাড়ি জেলা থেকে গ্রেফতার করে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ মে) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কালো পতাকা এবং তলোয়ার হাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনায় জড়িত আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গতকাল (বুধবার) শেরে বাংলা নগর থেকে সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এছাড়া এই হামলার পরিকল্পনায় প্ররোচনায় দেওয়ার অভিযোগে উগ্রবাদী বক্তা আলী হাসান ওসামাকে রাজবাড়ি জেলা থেকে বুধবার দেড়টায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্র জানায়, সাকিব কালো পতাকা ও তলোয়ার হাতে সংসদ ভবনে হামলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আলী হাসান ওসামাকে বাংলা ওসামাও বলা হয়। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায় উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি জসিম উদ্দিন রহমানীর মতো ওসামা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের কাছে আধ্যাত্মিক বক্তা হিসেবে পরিচিত।
তার বক্তব্য ও বই আনসার আল ইসলাম তাদের সদস্যদের মধ্যে প্রচার করে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের সঙ্গে আলী হাসান ওসামা সংশ্লিষ্টার বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
এর আগে ২ মে খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজিজিয়া মারকাজুল উলুম মাদরাসা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ৪ সদস্যকে আটক করে র্যাব-৩।
র্যাব-৩, ঢাকার একটি দল অতিরিক্ত এসপি রিনা রানীর নেতৃত্বে তেরখাদার আজিজিয়া মারকাজুল উলুম মাদরাসা থেকে তাদের আটক করে। পরে তাদের তেরখাদা থানা পুলিশের কাছে সোপার্দ করা হয়।
এর আগে ৩০ এপ্রিল পৃথক দু’টি অভিযানে রাজধানীর পল্লবী ও মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় দুই সদস্যকে আটক করে র্যাব। তারা ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিকৃত করে ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করায় সক্রিয় ছিলো। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে চরমপন্থার উস্কানি দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে জানা যায়।
কারা এই আনসার-আল-ইসলাম?
এর আগে এই সংগঠনটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে পরিচিত ছিল। একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক এবং সমকামী ও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেছে তারা।
এক সময় তারা আনুগত্য প্রকাশ করে আল কায়েদার কাছে। তারা নিজেদের আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ বলে দাবী করে।
এক সময় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ ছিল বলে জানা যায়। তারা অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালাত। পরবর্তীতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিজেদের নাম পরিবর্তন করে।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এই সংগঠনটির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দৃঢ় পর্যায়ে হয়েছে।
২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপর থেকে ঐ দলটির সদস্যরাই আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালিয়ে আসছে বলে পুলিশের ধারণা।
এই ধরণের সংগঠনগুলো অতি গোপনীয়তা বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করে, বিভিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করে এবং নতুন কর্মী রিক্রুট করে।
এরপর সদস্যদের প্রশিক্ষণও হয় গোপনে। এরপর কর্মীরা কেউ সামরিক দায়িত্ব নেয়া, কেউ যোগাযোগ, কেউ অর্থের যোগান এবং কর্মীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। পুরো কাজটাই হয় গোপনে।
ফলে শুধুমাত্র নিষিদ্ধ করে এদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যায় না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এজন্য সরকারী বাহিনীর সমন্বিত তৎপরতা বাড়ানো এবং সার্বিক নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করাকে জরুরী বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ