মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অর্ধেক মানুষের আয় কমে গেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ। তারা জানায়, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বে প্রতি দুজনে একজনের আয় কমে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মানুষ চাকরি হারিয়েছে অথবা তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। খবর রয়টার্সের।
গ্যালাপ ১১৭টি দেশের তিন লাখ মানুষের ওপর এই জরিপ চালিয়েছে। আজ সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে গ্যালাপ জানায়, করোনা মহামারির কারণে তাদের মধ্যে অর্ধেক মানুষের আয় কমে গেছে। গ্যালাপ বলছে, জরিপের এই পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ বলেছে, মহামারিতে তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ভারত, জিম্বাবুয়ে, ফিলিপাইন, কেনিয়া, এল সালভাদরের মতো দেশের মানুষও এই জরিপে অংশ নেন। তবে উন্নত ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষকেরা এক বিবৃতিতে বলেন, আয় কমে যাওয়া বা চাকরি হারানোর এই হার থাইল্যান্ডে বেশি। দেশটিতে ৭৬ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে। আর সুইজারল্যান্ডে এই হার কম। দেশটিতে এই হার ১০ শতাংশ।
বলিভিয়া, মিয়ানমার, কেনিয়া, উগান্ডা, ইন্দোনেশিয়া, হন্ডুরাস ও ইকুয়েডরে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, মহামারির কারণে তারা ঘরে বসে আছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বব্যাপী শ্রমিকেরা বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা বেশি কর্মহীন হয়েছেন। এসব শ্রমিক কম আয়ের কাজ যেমন খুচরা বিক্রি, পর্যটন ও খাদ্য সেবায় নিয়োজিত।
গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা অক্সফামের জরিপে জানানো হয়, মহামারির কারণে বিশ্বে নারীদের ৮০ হাজার কোটি ডলার আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গ্যালাপ আরও বলছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্ধেকের বেশি মানুষ জানিয়েছেন, তাঁদের চাকরি অথবা ব্যবসা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। জরিপের ফলাফল থেকে অনুমান করা যায়, বিশ্বব্যাপী এ রকম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৭০ কোটি।
জরিপে দেখা যায়, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানিতে প্রতি ১০ জনে একজন বলেছেন, তারা সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রেখেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ৩৯ শতাংশ।
গ্যালাপের জরিপ আরও বলছে, করোনার কারণে প্রতি তিনজনে একজন চাকরি অথবা ব্যবসা হারিয়েছেন। বিশ্বে এ রকম মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটি।
ফিলিপাইন, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ের ৬০ শতাংশ মানুষ তাদের চাকরি হারানো বা ব্যবসা লাটে ওঠার কথা জানিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডে এই হার ৩ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির গতিমন্থর হয়ে যাওয়ার কারণে নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষ, যাদের আয় আসে বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক খাতের উৎস থেকে, ব্যাপক কর্মহীনতার মুখোমুখি হয়ে ক্রয়ক্ষমতা হারাবে। করোনার তাণ্ডব অব্যাহত থাকলে তার সঙ্গে যুক্ত হবে রপ্তানি আয়ের ঘাটতি ও ক্রমহ্রাসমান বিদেশি রেমিটেন্স। এসব উপসর্গ থেকে দেখা দিতে পারে ব্যাপক মন্দাবস্থা, যে প্রক্রিয়াটি দুষ্টচক্রের মতো ঘটাতে পারে বিশাল অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং সংক্রমিত করতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।
তারা বলেন, করোনাকালীন মন্দা উত্তরণে সরকার বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের জন্য। সেই প্রণোদনার কতখানি কর্মহীন বেকার জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে, সেটি পরিমাপের সহজ কোনো উপায় নেই। কারণ, দেখা গেছে, প্রণোদনার সিংহভাগ অংশ চলে গেছে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী মহলের হাতে, যাদের হয়তো প্রণোদনার প্রয়োজন ছিল না। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রায় সব ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ সুবিধা আছে, তারাই প্রতিটি ব্যাংকের ঋণসীমার আনুপাতিক হারে প্রণোদনা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণসুবিধা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সব ব্যাংক মিলিয়ে প্রাপ্তব্য প্রণোদনার হিসাব মূল্যায়ন করার বিধান থাকলে এটি হয়তো সম্ভব হতো না। এতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রণোদনা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি পেত, যাদের অর্থনৈতিক প্রণোদনার প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক উল্টোটা। ফলে সরকারি সদিচ্ছাজাত প্রণোদনার সুফল কতখানি পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
তারা বলেন, এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি করা, যাতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো যায়, যার মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পাবে উৎপাদন ও অর্থনীতি। দেশে বর্তমানে চালু রয়েছে কয়েকটি মেগা প্রকল্প, যেখানে বিনিয়োজিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু প্রযুক্তিঘন এসব প্রকল্পে বিনিয়োজিত অর্থের তুলনায় সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান নগণ্য। ফলে বিশাল এসব মেগা প্রকল্পে বিনিয়োজিত অর্থের তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। বর্তমান মন্দাক্রান্ত পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ মুহূর্তে নিশ্চিত করতে হবে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান, যার মাধ্যমে অর্থনীতিতে সঞ্চারিত হবে বাড়তি চাহিদা ও গতি। তার সঙ্গে করতে হবে কাঠামোগত সংস্কার, ফেরাতে হবে অবকাঠামোর বর্তমান হাল এবং উন্নত করতে হবে মানবসম্পদের মান। এসব নিশ্চিত করা গেলেই কেবল দেশের অবিশ্বাস্য ও প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ