করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় নাজেহাল ভারত। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বিশ্ব রেকর্ড। এরইমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে কেন্দ্রসহ সব রাজ্য সরকারকে লকডাউন জারির পরামর্শ দিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার বিষয়ে শুনানির পর রবিবার (২ মে) লকডাউনসংক্রান্ত একটি নির্দেশও দিয়েছে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। এদিকে ভারতে গতকাল রবিবার ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
কি বলছে দেশটির সুপ্রিমকোট
সোমবার ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রবিবারের শুনানিতে সুপ্রিমকোর্ট বলেছে, ‘মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ব্যাপক হয়েছে। আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিচ্ছি, সংক্রমণরোধে ভবিষ্যতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে’। এই নির্দেশের পরই দেশের শীর্ষ আদালতের পরামর্শ, ‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয় যে মানুষের ভিড় ও সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন। প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে আপনারা লকডাউনের বিষয়টিও ভেবে দেখতে পারেন।’
লকডাউন জারি করার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি, লকডাউনের জেরে প্রান্তিক মানুষের অসুবিধার বিষয়টিকেও নজরে রাখার জন্য মোদি সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালত। এ ব্যাপারে আদালত বলেছে, ‘প্রান্তিক মানুষের জীবনে লকডাউন যে আর্থ-সামাজিক প্রভাব ফেলে, এ ব্যাপারে আমরা অবহিত। লকডাউন জারি করলে প্রান্তিক মানুষ যাতে বিপদে না পড়ে এ দিকেও নজর রাখতে হবে’।
ভারতে এক দিনে ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত
ভারতে গতকাল রবিবার ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ। আজ সোমবার দ্য হিন্দু পত্রিকার অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্থানীয় সময় গতকাল রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভারতে এক দিনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আগের দিন শনিবার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৯২ হাজারের বেশি করোনা রোগী। গত শুক্রবার ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
স্থানীয় সময় গতকাল রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভারতে এক দিনে ৩ হাজার ৪৫৫ জন করোনায় মারা যান। আগের দিন শনিবার করোনায় মারা যান ৩ হাজার ৬৮৯ জন, যা দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার ৯০০। মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯০৯ জন।
ভারতে শুক্রবারই প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। তার আগে টানা নয় দিন ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিন লাখের বেশি। তারও আগে ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। আর টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা যাওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে দৈনিক মৃত্যু তিন হাজারের বেশি।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড এখন ভারতের দখলে। গত ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এই রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। ভারতে শুক্রবার রেকর্ড চার লাখের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৬১৩। বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ৩২ লাখ ১৬ হাজার ২১৪ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৪৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোট মারা গেছেন ৫ লাখ ৯১ হাজার ৬২ জন।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ জন।
ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
ভারতে সংক্রমণের ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। তবে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ টিকার সংকটের কথা জানিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৮ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ২ মে পর্যন্ত দেশটির ১৫ কোটি ৬৮ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ