পৃথিবীতে প্রায় সব হিমবাহ গলে যাচ্ছে এবং সেটি পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত হারে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। হিমবাহগুলো প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে। এতে যে পরিমাণ পানি সমুদ্রে মিশেছে, তা প্রতিবছর সুইজারল্যান্ডকে ৬ মিটার পানির নিচে ডুবিয়ে ফেলতে পারে।
গত বুধবার আন্তর্জাতিক গবেষকদের করা গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। সাইন্স জার্নাল ন্যাচারালে এই জরিপ প্রকাশ হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
গবেষকেরা বলেছেন, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে হিমবাহ গলার হার বাড়তে শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত বরফ গলে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
আন্তর্জাতিক গবেষকদের দলটি প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তর বাদে পৃথিবীর ২ লাখ ২০ হাজার হিমবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। গত দুই দশকে হিমবাহ গলার সঠিক হার মূল্যায়ন করতে তারা এ গবেষণা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার টেরা কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বের হিমবাহগুলো গড়ে প্রতিবছর ২৬৭ বিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে। এতে যে পরিমাণ পানি সমুদ্রে মিশেছে, তা প্রতিবছর সুইজারল্যান্ডকে ৬ মিটার পানির নিচে ডুবিয়ে ফেলতে পারে।
ওই সময়ের মধ্যে হিমবাহ গলার হারও বেড়েছে বলে দেখেছেন গবেষকেরা। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হিমবাহ থেকে গড়ে প্রতিবছর ২৯৮ বিলিয়ন টন বরফ গলেছে। অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে গলনাঙ্ক।
এর ফলে সমুদ্রের উচ্চতা প্রতি বছর গড়ে শূণ্য দশমিক সাত-চার মিলিমিটার বেড়েছে। মোটের হিসেবে দুই দশকে এ হার ২১ শতাংশের কাছাকাছি।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, হিমবাহ গলে যাওয়ার গতি গত দুই দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। আগে যা ধারণা করা হচ্ছিল তার চেয়ে এই হার অনেকটাই বেশি।
গবেষকেরা বলেছেন, হিমবাহ গলে যাওয়ার বা হিমবাহের ভর হ্রাসের নিখুঁত হিসাব বের করা কঠিন। কারণ, হিমবাহ প্রত্যন্ত ও সহজে পৌঁছানো যায় না এমন স্থানে পাওয়া যায়। এর অর্থ বিশ্বের ২ লাখের বেশি হিমবাহের মধ্যে মাত্র কয়েক শ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে। গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, সবচেয়ে দ্রুতগতিতে হিমবাহ গলছে আলাস্কা, পশ্চিম কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে। নিউজিল্যান্ডে গত শতকের তুলনায় ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হিমবাহ গলার হার ৭ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে দ্রুতগতিতে গলা হিমবাহগুলো আলাস্কা ও আল্পসে অবস্থিত। গবেষকেরা পামির পর্বত, হিন্দুকুশ ও হিমালয়ের হিমবাহগুলো ধরে রাখা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফে ঢাকা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তুলনায় সমুদ্রে ভাসমান বিচ্ছিন্ন হিমবাহের গলনাঙ্ক বেশি। ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মূলত হিমবাহকেই দায়ী করছেন গবেষকরা।
গবেষণা প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক উলস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষক রবার্ট ম্যাকন্যাব জানান, বরফের ঘনত্ব কমার কারণ বুঝতে সাহায্য করবে এ গবেষণা। আলাদা আলাদা হিমবাহ নিয়ে এর আগে গবেষণা হলেও এতো বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা এটাই প্রথম।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে হিমবাহ ও বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের আয়তন কমে যাচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ এবং বরফের স্তরগুলো গলে যাচ্ছে। আর এতে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। আর তাতে দুনিয়ার উপকূলবর্তী শহরের জনগোষ্ঠী হুমকির মুখে পড়ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ