রাশিয়া ও চীনের উদ্ভাবিত করোনার টিকা বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে এ দুটি দেশের করোনার টিকা উৎপাদনে আর কোনো জটিলতা রইলো না।
এ প্রসঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে চীন ও রাশিয়ার টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যেসব কোম্পানির সঙ্গে ওই দু’টি দেশের চুক্তি হবে তারা টিকা উৎপাদন শুরু করবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আজকের বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শুরু থেকেই বলে আসছি যে ভ্যাকসিনের বিকল্প উৎসের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে। রাশিয়া ও চীনের ভ্যাকসিন উৎপাদন নিয়ে আলোচনা চলছে। তার মানে আবার এই নয় যে প্রথম উৎস (ভারতের সেরাম) বাতিল হয়ে গেছে। প্রথম উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টাও আমরা করে যাচ্ছি। বিকল্প হিসেবে চায়না ও রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা চলছে।’
ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর বিকল্প হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে করোনাভাইরাসের টিকা আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল সরকার। এরপর এ দুটি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের জন্য চুক্তিও সই করেছে বাংলাদেশ। ফলে এ দুটি দেশের করোনার টিকা উৎপাদনে সব জটিলতা দূর হলো।
এসব অনুমোদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার জানান, আজকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কিট ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর কেনাকাটার দুটি প্রস্তাব ছিল।
যেহেতু ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছে তাই বিকল্প সোর্স থেকে টিকা নেয়ার জন্য রাশিয়া ও চীনের দুটি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ এবং চীনের সিনো ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
উৎপাদন করবে কোন কোম্পানি?
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে পপুলার, ইনসেপ্টা এবং হেলথকেয়ার টিকা তৈরি করতে পারে। ইনসেপ্টা রাশিয়ার সঙ্গে এরইমধ্যে কথাবার্তা শুরু করেছে।
‘তারা বলেছে আমাদের দেশে টিকা তৈরি করা যায় কিনা। টেকনোলজি ট্রান্সফারও হতে পারে, আবার বাল্ক এনে ফিলার ফিনিশও হতে পারে। কিনে এনেও হতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশেই এই ভ্যাকসিন তৈরি হবে।’
বুধবারের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার বলেন, রাশিয়ার স্পুৎনিক ও চীনের সাইনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে তৈরির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি কোন কোম্পানি এই টিকা বানাবে সেটি আলোচনায় উঠে আসেনি।
তবে দেশি কোম্পানিগুলোর সেই সক্ষমতা আছে, এটা আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমোদনটা দেওয়া হয়েছে। কোনো বিশেষ কোম্পানির নাম আলোচনায় আসেনি। বলা হয়েছে, যারা সক্ষম কেবল তাদেরকে দিয়ে উৎপাদন করানো হবে।
এ বিষয়ে কারিগরি কমিটি বিস্তারিত আলোচনা করেছে। অতি দ্রুততার সঙ্গে এটা বাস্তবায়ন হবে।
সুরক্ষা সামগ্রী ও টেস্ট কিট কেনার অনুমোদন
বৈঠকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) মাধ্যমে আরটি-পিসিআর টেস্ট কিট এবং পিসিআর ল্যাব কনজ্যুমেবলস বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার নীতিগত অনুমোদনও দেওয়া হয়।
একই প্রতিষ্ঠানের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনারও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিগত দিনগুলোতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে মাস্ক কেলেঙ্কারিসহ অন্যান্য নিম্নমানের সামগ্রী কেনার বিষয়টি উল্লেখ করে আবারও কেন একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা নিয়ম নীতি অনুসরণ করেই অনুমোদন দেই। কেনাকাটার সময় যদি কোনো ব্যত্যয় থাকে মিসম্যাচ থাকে, তারা যদি কোয়ালিটি এনসিওর করতে না পারে সেটা তাদের ব্যাপার।”
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯৫২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ