মাস দেড়েক আগে মুসলিম নারীদের বোরকা নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগ নেয় শ্রীলঙ্কা। তবে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের জন্য দেশটির মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। অবশেষে বোরকা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা।
‘জাতীয় নিরাপত্তা’র কারণ দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দেশটির জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী সারাথ ওয়েরাসেকেরার উত্থাপিত এই প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় ক্যাবিনেট। খবর আল জাজিরার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, জাতীয় নিরপত্তা ইস্যুতে সামনে আনা এই প্রস্তাবটি আইনে কার্যকর হলে মুসলিম নারীদের বোরকাসহ মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ হবে দেশটিতে।
শ্রীলঙ্কার জননিরাপত্তা মন্ত্রী শরৎ ওয়েরাসেকেরা নিজের ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে মুসলিম নারীদের বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মঙ্গলবার দেশটির মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। পরে প্রস্তাবটির অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
প্রস্তাবটি এখন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং আইনে পরিণত করতে হলে সেটাকে অবশ্যই শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে অনুমোদিত হতে হবে। তবে সেটা খুব কঠিন কাজ নয়। কারণ, দেশটির পার্লামেন্টে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
বোরকাকে কেবল একটি কাপড় হিসেবে উল্লেখ করে জননিরাপত্তা মন্ত্রী শরৎ ওয়েরাসেকেরা বলেন, এটি কিছু মুসলিম নারী শরীর ও মুখ ঢাকতে ব্যবহার করেন। তার দাবি, বোরকা ‘ধর্মীয় চরমপন্থার প্রতীক’ এবং এটা নিষিদ্ধ করা হলে জাতীয় নিরাপত্তার উন্নতি হবে।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় ইসলামী জঙ্গিদের বোমা হামলায় আড়াইশ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর দেশটিতে বোরকা পরা সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
গত বছর শ্রীলঙ্কা সরকারের আরেকটি গৃহীত পদক্ষেপ স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। নিয়ম করা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার পরিবর্তে শ্মশানে দাহ করতে হবে। এ নিয়ে দেশ–বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের একদম শুরুর দিকে এ নিয়ম তুলে নেয় দেশটির সরকার।
শ্রীলংকায় শতাব্দী প্রাচীন সময় থেকেই মুসলিমরা বসবাস করছে এবং এখন মুসলিমদের সংখ্যাও সেখানে উল্লেখযোগ্য। তবে দেশটির মোট দুই কোটি দশ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা দশ শতাংশের নিচে। তবে এর মধ্যে অল্প পরিমাণ নারীই শরীর ও মুখমণ্ডল ঢেকে এমন নিকাব বা বোরকা পরিধান করে থাকে।
দেশটির মুসলিম পণ্ডিতদের সংগঠন অল সেলন জামিয়াতুল উলামাও মুখ ঢাকা পড়ে যায় এমন পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে নারীদের বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মুসলমানরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, বোরকা নিষিদ্ধের এই বার্তা এটাই বলছে- লঙ্কান মুসলমানরা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এতে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংশয় তলানিতে চলে যাবে।
শ্রীলঙ্কা ছাড়াও কয়েক বছর ধরে ইউরোপে একাধিক আইএস হামলার পরে বোরকার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বেশ কিছু দেশ। এর আগেই ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম ও ল্যাটভিয়া— ইউরোপের এই সাতটি দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সম্প্রতি সময়ে সুইজারল্যান্ডও সে পথেই হেঁটেছে। এবার তাদের সাথে যোগ দিল শ্রীলঙ্কা।
পাশাপাশি কিছু মুসলিম দেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি আছে বিশেষ এই পোশাকটির বিরুদ্ধে। তিউনিসিয়া, নাইজার, মরোক্কো, তাজিস্তান, শাডসহ আরও অনেক মুসলিম দেশেই বোরকা নিষিদ্ধ রয়েছে। তুরস্কেও কয়েক বছর বোরকা নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশটির সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ ছিল।
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমান বিশ্বে বোরকা মুলত মিডলইস্ট এবং আমাদের এই উপমহাদেশেই কেবল চালু আছে। কয়জন নারী স্বেচ্ছায় এই কালো নেকাবসহ বোরকা পরেন একটা সার্ভে করলে ভালো হতো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই পোশাক নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয় পুরুষেরা। প্রচন্ড গরমে কালো বোরকার নিচে গরমে হাসফাস করা নারীরা ভয়েও কোনদিন জানাতে পারেনা তাদের কষ্টের কথা। এছাড়া বোরকা ব্যবহৃত হয় চুরি, ডাকাতিসহ নানা ক্রাইমে। চেহারা লুকিয়ে রাখতে ছদ্মবেশ নিতেও বোরকার জুড়ি মেলা ভার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ