উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করেছিল যে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। এই পূর্বাভাস হিসাব করার সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিবেচনা করা হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে এনেছে এই দাতা সংস্থা। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
আজ বুধবার (২৮ এপ্রিল) ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের। এ সময় বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ।
প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সম্পর্কে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮-৯ মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রাক্কলন করেছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের শুরুতে লকডাউন দেওয়া হয়। চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এগুলো অবশ্যই প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। এ কারণে আমাদের প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে আসতে পারে। তবে ৫ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো।
টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করে এডিবি। এ জন্য বাংলাদেশকে ৯৪ কোটি ডলার দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা চলছে বলে জানায় এডিবি।
এ বিষয়ে মনমোহন প্রকাশ বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার জন্য শুধু সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিকল্প উৎস খোঁজা উচিত। কোরিয়া ও থাইল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা বানায়। এ ছাড়া স্পুটনিক ও সিনোভ্যাক্স নিয়েও আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এ মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হলো টিকার সরবরাহ।
এডিবি মনে করেন, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কত হবে, তা নির্ভর করবে কীভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি টিকা কার্যক্রম কেমন চলছে, এটিও অর্থনীতির সামনের দিকে যাওয়ার সূচক হিসেবে কাজ করবে।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি সামাল দিতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশে রফতানির গতি বাড়ায় প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সেই সঙ্গে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার সুফল মেলার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। আগামী অর্থবছরে আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেমিটেন্সের শক্তিশালী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্যক্তিখাতে ভোগব্যয় বাড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও গতি আসবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ধীরে ধীরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারায় ফিরবে। অঞ্চল হিসেবে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সবচেয়ে দ্রুত হবে। ২০২০ সালে যেখানে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ৬ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল, এবার তা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়বে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত যদিও মহামারিতে নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারপরও এ বছর সেখানে ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল।
ব্রিফিংয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, তবে এ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের উপর।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, ভারত যে গতিতে টিকাদান চালিয়ে নিচ্ছে, তাতে অগাস্টের মধ্যে সেখানে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালেই হয়ত ভারত ‘হার্ড ইমিউনিটিতে’ পৌঁছে যাবে।
এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি যতটা হবে বলে আগে ভাবা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে বেশি হবে বলেই এডিবির ধারণা।
তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়লে এবং টিকাদানের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো না গেলে অঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো যে কঠিন হবে, সে কথাও এডিবি মনে করিয়ে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। করোনা মহামারির বাস্তবতার কারণে পরে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নিয়ে আসে সরকার। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসেবে অর্জন হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসেবে সেটি আরও কমবে বলে জানা গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ