ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে গেলেও এর পুরো সুবিধা ভোগ করছে ক্ষমতাসীনরা। পান থেকে একটু চুন খসে পড়লেই মামলা দিয়ে দিচ্ছে আর পুলিশও অন্যান্য মামলার চেয়ে অধিক আগ্রহ নিয়েই গ্রেপ্তারে এগিয়ে আসছে। ক্ষমতাসীন দল ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কোনো কিছু বলতে গেলেই লোকজন জড়িয়ে যাচ্ছে মামলায়। এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজনের পোস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মন্তব্য করে কটুক্তির অভিযোগে জয়পুরহাটের কালাইয়ে আমানুল্লাহ আমান (১৯) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গতকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) রাতে কালাই উপজেলার বিয়ালা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কালাই পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত আমানকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের হাজির করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
কালাই পুলিশ স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগ সভাপতি মঈনুল ইসলাম জাজু সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নেতা রফিকুল ইসলাম মাদানি ও মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় একটি স্ট্যাটাস দেন। পরে আমানউল্লাহ আমান তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে ছাত্রলীগ নেতার ওই পোস্টের নিচে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। যে মন্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় উত্তেজনাও বেড়ে যায়। এ ঘটনায় আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে কালাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাফিকুল ইসলাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ বুধবার রাতে অভিযুক্তকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তৌহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বুধবার বিকেলে ওই মন্তব্য দেখার পর আমি থানায় মামলাটি করেছি। মন্তব্যকারীর আইডিটি ছিল আমান খান নামে। পোস্টে তার মন্তব্যটি খুবই আপত্তিকর ছিল।’
এদিকে গতপরশু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার খুলনার সিনিয়র সাংবাদিক এনটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান আবু তৈয়বের জামিন আজ নামঞ্জুর হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সকালে ভার্চ্যুয়াল আদালতে শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন। আবু তৈয়বের পক্ষের আইনজীবী আক্তার জাহান রুকু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিক আবু তৈয়বকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ২০ এপ্রিল আটক করে থানায় আনা হয়। ২১ এপ্রিল সকালে তাকে ওই মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী হয়েছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক।
অভিযোগে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে মিথ্যা ভিত্তিহীন আক্রমণাত্মক এবং মানহানিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনমনে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। মামলার আরেক আসামি হলেন দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার রামপাল প্রতিনিধি সবুর রানা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার আসামির দণ্ড মওকুফ হয় অথবা দ্রুত জামিন হয়, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাত থেকে লুটপাটকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, হাজার-কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী সহজেই দেশ ছাড়তে পারে, কিন্তু ফেসবুকে সরকারবিরোধী কিছু লেখা যেন তার চাইতে বড় অপরাধ!
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ