মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কুপোকাত ভারত। গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) থেকে দেশটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনা টিকা থেকে রক্তজমাট বাঁধার ঝুঁকি খুবই কম বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-ইএমএ। তাই এই উপসর্গকে খুবই বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
ভারতে করোনায় প্রতি ঘণ্টায় ৬০ জনের বেশি মৃত্যু
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত দিশাহারা পুরো ভারত। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রবিবার প্রতি ঘণ্টায় দেশটিতে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৯৫ জন। আর একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬২ জনের। সোমবার (১৯ এপ্রিল) সেই সংখ্যাটা বেড়ে ঘণ্টায় সংক্রমণ ও মৃত্যু যথাক্রমে ১১ হাজার ৪০৮ এবং ৬৭। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সংক্রমণ সামান্য কমলেও (ঘণ্টায় ১০ হাজার ৭৯৮) ঘণ্টাপ্রতি মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ জনে। দৈনিক সংক্রমণের মতোই দৈনিক মৃত্যুর তালিকাতেও শীর্ষে মহারাষ্ট্র রাজ্য। আর দৈনিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি থাকলেও সংক্রমণে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ।
এদিকে দিল্লির পরে এবার লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন জারি থাকবে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বুধবার (২১ এপ্রিল) সিদ্ধান্ত নেবেন, রাজ্যে লকডাউন কার্যকর করা হবে কি-না। কেরালায় গতকাল থেকেই দুই সপ্তাহব্যাপী নৈশ কার্ফু বলবৎ রয়েছে।
দিল্লি ও মুম্বাইয়ের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রবল অক্সিজেন সঙ্কটের কথা জানিয়েছে। হাসপাতালগুলোর বক্তব্য, অবস্থা এমন যে, আর ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই অক্সিজেনের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। পুনের একটি হাসপাতালে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয় রোগীদের।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকাকরণের হার বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। তাই প্রতিষেধকের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। রেমডেসিভিরসহ কিছু ওষুধের কাঁচামালের আমদানি শুল্কও কমিয়েছে ভারতের কেন্দ্র সরকার।
ভারতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ১৩০ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৭০ জনের।
জনসনের টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি খুবই কম: ইএমএ
ইএমএ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গকে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার খুব ‘বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার’ তালিকাতেই রাখা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাগুলো ঘটেছে টিকা নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর ৬০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে। তাদের বেশির ভাগই ছিল নারী।
রক্তে প্লাটিলেট কম থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার সম্পর্ক এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে। কিন্তু কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি যতটা বেশি, টিকা গ্রহণের কারণে সেটা হওয়ার ঝুঁকির তার চেয়ে অনেক কম।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই ইএমএ বলছে, কারও দেহে একসঙ্গে প্লাটিলেট কম থাকার এবং টিকা গ্রহণের ফলে রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া খুবই বিরল ঘটনা। তার ওপর সবচেয়ে বড় কথা, জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির চেয়ে লাভ অনেক বেশি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ আর এখন জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া সেই একই উপসর্গ খুবই বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার মানে এই নয় যে টিকাগুলো অনিরাপদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই টিকার সম্ভাব্য ঝুঁকির চেয়ে টিকা নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখাটা বেশি ভাল। আর যে কোনও অনুমোদিত চিকিৎসা কিংবা টিকারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
ইএমএ রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। এর আগে রক্ত জমাট বাঁধার কয়েকটি ঘটনা সামনে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দেশটিতে জনসন অ্যান্ড জনসনের কোভিড-১৯ টিকা স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। যার ভিত্তিতে গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত করে। গত ৭ এপ্রিল ইএমএ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার বিষয়েও একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছিল।
ওই সময়ে ইউরোপে আড়াই কোটির বেশি মানুষকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৮৬ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার বিরল উপসর্গ দেখা দেয়। পরে যুক্তরাজ্য সরকার ৩০ বছরের কম বয়সীদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ