ভারতে করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন ভয়াবহ হয়ে ওঠছে। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে একদিনে রেকর্ড ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ১৬১৯ জনের। সোমবার (১৯ এপ্রিল) হিন্দুস্তান টাইমস এসব তথ্য জানায়। শীর্ষে মহারাষ্ট্র, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ। রাজধানী দিল্লির অবস্থাও বেশ খারাপ। সেখানে এক দিনে আক্রান্ত ২৫ হাজার ৪৬২ জন। তারপর দিল্লিতে আগামী সোমবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
সংকট স্বীকার করে নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান, শহরের ২ কোটির বেশি মানুষের জন্য এখন হাসপাতালগুলোয় ১০০টির কম ক্রিটিক্যাল কেয়ার শয্যা খালি আছে। সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। দ্রুত পূরণ হয়ে যাচ্ছে শয্যা। জরুরি প্রয়োজনে পাওয়া যাচ্ছে না অক্সিজেন, ওষুধ। সামাজিক মাধ্যমে এমন হাজারো অভিযোগ দেখা যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে কেজরিওয়াল আরও বলেন, উদ্বেগের বিষয় হলো, সংক্রমণ শনাক্তের হার লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তা ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর মানে হলো, আরও মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হবেন। আরও শয্যা লাগবে। অক্সিজেন প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে শিল্পক্ষেত্রে অক্সিজেন ব্যবহার করা যাবে না। সেই অক্সিজেন হাসপাতালে সরবরাহ করা হবে। তবে ওষুধ, পরমাণু চুল্লির মতো নয়টি জরুরি জায়গায় আগের মতোই অক্সিজেন ব্যবহার করা যাবে।
করোনা রোগীদের অনেক হাসপাতালে রেমডেসিভির দেয়া হয়। কিন্তু সেই ইঞ্জেকশনও পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনেক রাজ্যই সমানে তা চাইছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণ রেমডেসিভির উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে তারপরই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী থানায় হাজির হয়ে বলেন, এটা দলীয় স্তরে সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছিল।
এবার কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন বা কোনো কড়াকড়ির কথা ঘোষণা করছে না। তারা রাজ্যগুলিকে বলছে, কড়া ব্যবস্থা নিতে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যই এখন রাতে কারফিউ জারি করছে। বিহার, রাজস্থান, তামিলনাড়ু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব স্কুল, সিনেমা হল, ধর্মস্থান, শপিং মল বন্ধ থাকবে। রাজস্থানও ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা করেছে।
মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, দিল্লি, কেরালা, তামিলনাড়ু, গোয়ার মতো রাজ্য থেকে তাদের রাজ্যে এলে ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীর হাতে তার জন্য বিশেষ ছাপ মেরে দেয়া হবে। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া কাউকে রাজ্যে ঢুকতে দেয়া হবে না। তবে রাজ্যগুলোর আশঙ্কা, করোনা-সঙ্কট আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন কুম্ভমেলা ফেরত মানুষেরা। মহারাষ্ট্র সরকার ইতোমধ্যেই এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। দেশের অন্য রাজ্যও চিন্তিত।
করোনার মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারনায় নরেন্দ্র মোদি
দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে মিছিল–সমাবেশ করছেন তারা। এসব কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (এএপি) বলেছিলেন, এতে করোনার সংক্রমণ বাড়বে ছাড়া কমবে না। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার বাতিল করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। যদিও করোনার বিরুদ্ধে চলমান লড়াই জোরদার করার অঙ্গীকার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার মোদি উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি তার টুইটে বলেন, ‘আমরা গত বছর যেমনটা করেছিলাম, এবারও সাফল্যের সঙ্গে আরও বেশি গতি ও সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করব।’
ভারত থেকে করোনা পজিটিভ হয়ে দেশে ফিরলো ১৭ বাংলাদেশী
চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে ভারতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশীরা। বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ দিনে ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে কাগজপত্র পরীক্ষায় ১৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে। এছাড়া আরটিপিসিআর সনদ না থাকায় সন্দেহভাজন যাত্রীদের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করেও পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। এতে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বন্দর এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে একমাত্র বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে স্থলপথে দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত সচল রয়েছে। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় দেশের অন্যান্য স্থলপথে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সায়মিক বন্ধ। বর্তমানে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে গত বছরের জুলাইয়ের পর ইস্যু করা নতুন ভিসা আর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর থেকে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ লাগছে। এপথে যারা যাতায়াত করছেন তাদের ৮৫ শতাংশ মেডিকেল ভিসায়। ১০ শতাংশ বিজনেস, বাকিরা স্টুডেন্ট আর কূটনৈতিক ভিসায় যাতায়াত করছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মশিউর রহমান জানান, ভারতে গিয়েও যাত্রীরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাদের পরামর্শ তাদের দেয়া হচ্ছে। করোনা ও অন্ধ প্রদেশের অজ্ঞাত ভাইরাস প্রতিরোধে ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে সতর্কতা জারি রয়েছে। গত ১৬ দিনে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত থেকে ফিরে আসা ৮ হাজার ৯৫৫ জন বাংলাদেশীর মধ্যে ১৭ জন ছিল করোনা আক্রান্ত। এছাড়া আরটিপিসিআরের নেগেটিভ সনদ না থাকা এমন ১০৬ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করেও একজনের করোনা পজিটিভ মিলেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ