কাজী ফয়সাল : ঢাকার বায়ু স্বাস্থ্যকর কি না এই প্রশ্ন এখন প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। বরং সর্বজনবিদিত সত্য হল এই যে, বিশ্বের দুষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। এবং অব্যাহতভাবেই দুষিত বায়ুর তালিকায় ঢাকা শীর্ষে অবস্থান করছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্যমতে ঢাকার আজকের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১১৪ (পিএম ২.৫)। এই একিউআই স্কোর হরহামেশাই ২০০ ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের ১৯ মার্চ ঢাকার বায়ু মান ঠেকেছিল ৪৬৯ তে(পিএম-২.৫), যা যেকোনো মানুষের জন্যই বিপজ্জনক।
বাতাসে অতি সূক্ষ্ণ বস্তুকণা পিএম-২.৫–এর পরিমাণ পরিমাপ করে বায়ুর মান নির্ধারণ করা হয়। এই মান যদি ০ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে থাকে তাহলে তাকে বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর বলা হয়। বায়ুর মান ১৫১-২০০ থাকা মানে সে বায়ু অস্বাস্থ্যকর এবং ২০০-৩০০ হলে সেটা খুবই অস্বাস্থ্যকর।
দ্য ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রজেক্ট এর প্রতিবেদনে এপ্রিলের প্রথম ৮ দিনের মধ্যে ৬ দিনের বায়ুর মান ছিল অস্বাস্থ্যকর (১৫০-২০০) এবং ২ দিনের বায়ুর মান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর (২০০-৩০০।
২০২১ সালের জানুয়ারী-মার্চ পর্যন্ত ৯০ দিনের সময়কালে, বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর ঢাকায় বায়ুর গুণমান ১২ দিনের জন্য ‘বিপজ্জনক’, ৫৮ দিনের জন্য ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’, ১৯ দিনের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২১ সালে, একিউআইয়ের দৈনিক গড় স্কোর ছিল জানুয়ারিতে ২৬১, ফেব্রুয়ারিতে ২৩১ এবং মার্চ মাসে ২১১, যা গত পাঁচ বছরে রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ।
চলমান এই দূষণের মধ্যে নগরবাসীদের বসবাস করা হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। বায়ুদূষণের ফলে ফুসফুসজনিত অসংক্রমক রোগের প্রাদুর্ভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে বায়ুদূষণ হৃদরোগ, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকি প্রবল মাত্রা বৃদ্ধি করছে। রাস্তাঘাট ছাড়াও ঘরের মধ্যেও বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি ফলে মানুষ কোথায় এই দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কোভিড-১৯ এর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরন করা এবং সুস্থতা লাভে দেরি হওয়ার অন্যতম একটি কারন এই বায়ু দূষণ। নগরবাসীর ফুসফুস দূষণের কারনে আগে থেকেই দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় করোনা অনেক সহজেই আক্রান্তদের কাবু করে ফেলছে।
ঢাকা শহরের ধুলা-দূষণ নিয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটি গবেষণা রয়েছে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ মেট্রিক টন ধূলিকণা জমে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ১৩ হাজার মেট্রিক টন ধুলা জমছে। এই জমে থাকা ধুলা দিনের বেলা বাতাসের সঙ্গে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে, আবার রাতে গাড়ির অতিরিক্ত গতির সঙ্গে বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকার চারটি পার্ক ও উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির ৭৭টি গাছের পাতা সংগ্রহের পর বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই গবেষণা পরিচালনা করে ক্যাপসের গবেষক দল।
ক্যাপসের পরিচালক আহ্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার এর মতে, “দুই কারণে ঢাকার বায়ু বেশি দূষিত। প্রথমটি হচ্ছে বাতাসের দূষিত উপাদান বাতাসেই রয়ে যাচ্ছে। শহরে বড় প্রকল্পের কাজ, নির্মাণাধীন ভবনের কাজ, যানবাহনের ধোঁয়ায় ঢাকার বায়ুর চাপ বেশি। এই দূষিত অংশ বায়ুর নিম্নস্তরে ২০০–৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করছে। ফলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।“
শুধু ঢাকা শহর নয় গোটা বাংলাদেশ বায়ুদূষণে বিশ্বে এই নম্বরে অবস্থা করছে। বায়ু দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নিকট ভবিষ্যতে কোভিড ছাড়াও বহু মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে এবং বহু মানুষের প্রাণ সংশয় হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ