পাকিস্তানে উগ্রপন্থি আচরণের দায়ে একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংসতার জেরে ইসলামি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)এর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। এ সপ্তাহে দেশটির প্রধান কয়েকটি শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে টিএলপি–সমর্থকদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। জানা যায়, ইতোমধ্যে দেশটির মন্ত্রিসভায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। খবর আরব নিউজ ও এনডিটিভি
ফ্রান্সে ইসলামবিরোধী ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের ঘটনার জেরে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবি জানান টিএলপিপ্রধান আল্লামা রিজভি। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। টিএলপিপ্রধান সাদ রিজভিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত সোমবার পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে তাণ্ডব চালান ধর্মীয় দলটির নেতাকর্মীরা।
লাহোরের পুলিশ প্রধান গোলাম মেহমুদ দোগার এক হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে বলেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছেন, এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ১২৫ জন।
গত মঙ্গলবার রিজভীর বিরুদ্ধে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বিক্ষোভকারীরা তাকে অপহরণ করেছিল এবং পরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, টিএলপির সন্ত্রাসী হামলায় দুজন পুলিশ নিহত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো ৩৪০ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির দায়ে এ ধর্মীয় দলটির নিষিদ্ধের আবেদন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। আশা করা যাচ্ছে মন্ত্রিসভায় এ প্রস্তাবটি পাস হবে।
পরে এক টুইট বার্তায় পাকিস্তানের এই মন্ত্রী লেখেন, সন্ত্রাস বিরোধী আইনে তেহরিক-ই লাব্বায়িক পার্টি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। তিনি জানান, বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি এলাকা থেকে পুলিশ সদস্যদের অপহরণ করেছে। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাইকে উদ্ধার করেছে।
পাকিস্তানের ধর্মীয় দল তেহরিক -ই লাব্বাইক (টিএলপি) প্রতিষ্ঠা করেন খাদিম হুসেইন রিজভী। গত নভেম্বরে ফ্রান্সে হযরত মুহম্মদ সাঃ এর ব্যঙ্গচিত্র আঁকার প্রতিবাদে পাকিস্তান থেকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার এবং ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। বিক্ষোভের কয়েকদিন পর দলটির প্রতিষ্ঠাতা খাদিম হুসেইন রিজভী স্বাভাবিক কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার ছেলে সাদ রিজভী দলটির সভাপতি মনোনীত হন।
ফ্রান্সে গত বছর ইসলামবিরোধী ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের পর থেকে বিক্ষোভ করে আসছে টিএলপি। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠানো ও দেশটি থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে দলটি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টিএলপির এ দাবি ঝুঁকিপূর্ণ, যা বাইরের বিশ্বে পাকিস্তানকে ‘উগ্রবাদী জাতি’ হিসেবে তুলে ধরছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাসেদ বলেন, শেষ মূহর্ত পর্যন্ত আমরা তাদের সঙ্গে মীমাংসার ভিত্তিতে একটি রেজুলেশন মন্ত্রীসভায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। তারা প্রতিবাদ করতে চায়। টিএলপি এমন রেজুলেশন চায় যে সকল ইউরোপীয় কূটনৈতিক পাকিস্তান ত্যাগ করুক। আমরা একটা খসড়া করতে চেয়েছিলাম যেটাতে রাসুলের সম্মান উঁচু থাকবে। কিন্তু তারা বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে চরমপন্থি দেশ হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
তবে টিএলপি জানায়, সরকার এবং দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিক্ষোভের ইতি টেনেছে তারা। তাদের দাবি, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারে সম্মত হয়েছে ইসলামাবাদ। যদিও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘৯/১১’–এর হামলার পর পাকিস্তান বেশ কিছু সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। সে সময় দেশটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং উগ্রবাদ দমনে নানা অভিযান ও পদক্ষেপ নেয়। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন নির্বাচনে অংশ নেওয়া, অর্থ সংগ্রহ ও দলীয় কার্যালয় রাখার অধিকার হারায়।
গত ১৬ নভেম্বর টিএলপির সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের চুক্তি হয়। তাদের দাবি নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য তিন মাস সময় নেয় সরকার। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি চুক্তির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে সরকার জানায়, এ মুহূর্তে টিএলপির দাবি মানা সম্ভব নয় এবং এর জন্য আরও সময় দরকার। ফলে, টিএলপি তাদের দাবি মানার জন্য আরও আড়াই মাস সময় দেয় সরকারকে। ২০ এপ্রিল এ সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা।
গত রোববার সমর্থকদের উদ্দেশে একটি ভিডিওবার্তা দেন আল্লামা রিজভি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে টিএলপি কর্মীদের লংমার্চের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন তিনি। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করে সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ