করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য বাদে পুরো ইউরোপ ও আরও ১২টি দেশ থেকে বাংলাদেশ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় লেবাননও ছিল। কিন্তু দেশটিতে আটকে পড়ার কারণে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে ২৭৫ জন যাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। শর্ত ছিল ঢাকায় সবাইকে দুই সপ্তাহের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কিন্তু দেশে ফেরার পর তাদের কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যেতে রাজি নয়। ঢাকায় পৌঁছানোর পর কোয়ারেন্টিনে না থাকার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা। খবর বিবিসি।
জানা যায়, সোমবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে ফ্লাইটটি ২৭৫ জন যাত্রী নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে।
এ ব্যাপারে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদুল আহসান জানিয়েছেন, ‘তারা ফেরার পর থেকেই বিমানবন্দরের মধ্যে মিছিল, বিক্ষোভ করছেন। বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করেছেন। শুধু তারাই নয়, তাদেরকে নিতে বিমানবন্দরে যেসব আত্মীয়-স্বজন এসেছে তারাও বিশৃঙ্খলা করছেন।’
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে লেবাননে রাজনৈতিক সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবং সর্বশেষ বৈরুত বিস্ফারণের পর এক প্রকার কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে অর্ধাহারে এবং অনাহারে থাকার কথা জানিয়ে প্রবাসী শ্রমিকরা বাংলাদেশে ফেরত আসতে চাইছেন। এর আগে কয়েক দফায় তাদের দেশে আনা হয়েছে।
তৌহিদুল আহসান বলছেন, ‘আমরা কয়েক দফা তাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমরা তাদের প্রস্তাব দিয়েছি হজ ক্যাম্পে সরকার যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছে সেখানে যেতে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই রাজি হচ্ছেন না।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে তাদের হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনা করছে।
এ নিয়ে বিক্ষোভরত যাত্রী বা তাদের স্বজনদের বক্তব্য জানা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
এর আগে গত ১ এপ্রিল করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসা আরও ৮৩ জন লন্ডন প্রবাসীকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়।
(০১ এপ্রিল) সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে তারা হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে আসেন।
এরপর তাদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী এবং পুলিশের তত্ত্বাবধানে যাত্রীদেরকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে দেশে। সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে বা হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার খরচও তাদের বহন করতে হবে। দেশে ও বর্হিবিশ্বে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া থাকলেও বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনের এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোয়ারেন্টিন শেষে পিসিআর পরীক্ষার যেসব যাত্রীর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসবে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলো ছাড়া অন্য যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে আসলে সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর করোনার কোনো উপসর্গ দেখা না গেলে কঠোরভাবে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। যদি কারো শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা যায় তাহলে তাদেরকে নিজ খরচে সরকার অনুমোদিত হোটেল বা সরকারি স্থাপনায় বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।’
করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও সব যাত্রীকে বাংলাদেশে আসার আগে করোনার পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হবে এবং তা বিমানবন্দরে দেখাতে হবে।
ফ্লাইট ছাড়ার ৭২ ঘণ্টা আগে পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে বলেও ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ আমদানির ক্ষেত্রে কেবল সরকারের সতর্কতা বাড়ালেই হবে না, দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়াটাও নিয়ন্ত্রণে আনার সতর্কতা বাড়াতে হবে। দেশের পরিস্থিতি দেখলে এখনো মনে হবে না যে দেশে করোনা এতটা ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই লঙ্ঘন হচ্ছে করোনা বিধি। দেশের অভ্যন্তরে করোনা সক্রমণ রোধে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে বলে মনে করেন তারা।
সরকার নির্ধারিত হোটেলগুলোতে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন চলছে। সেখানকার অববস্থাপনা নিয়ে বলেন, এর আগেও সরকার নির্ধারিত স্থানে কোয়ারেন্টিন থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। করোনার টেস্ট ঠিকভাবে না করা, সনদপত্র ভালো করে না দেখেই যাত্রী ছেড়ে দেওয়া ও অর্থের বিনিময়ে কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে যাত্রী ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে করোনা রোধে তেমন কোনো ফল দেবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ