ঝালকাঠিতে কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুই যুবককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, শহরের সিটিপার্ক এলাকার মো. রানা খলিফা (২৮) ও মো. নাদিম (৩২)। রানা খলিফা ঝালকাঠি শহর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সিটি পার্ক নতুন চর এলাকার প্রবাসী ইদ্রিস খলিফার ছেলে। আর নাদিম রিং রোড এলাকার মো. আউয়াল এন ছেলে এবং একটি ‘ছ’ মিলের কর্মচারী। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার নথি ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে ভাড়া বাসায় কিশোরীকে একা পেয়ে রানা খলিফা ও নাদিম মৃধা তুলে নিয়ে যান। বাসার পাশের খালপাড়ের একটি বাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন রানা খলিফা। আর ধর্ষণে সহায়তা করেন নাদিম মৃধা। পরদিন সকালে বাসায় ফিরে কিশোরীকে সেই বাগান থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন তার মা।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা ১৮ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি সদর থানায় রানা খলিফা ও নাদিম মৃধাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। কিছুদিন পর কিশোরীর শরীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পরিবারের লোকজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জানতে পারেন মেয়েটি গর্ভবতী। একই বছরের শেষের দিকে ওই কিশোরী কন্যাসন্তান প্রসব করে। এ ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র একই বছরের ১৫ সেপ্টম্বর আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা গৌতম কুমার ঘোষ।
আদালতের বিচারক রায়ের আদেশে বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুটির বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভরণপোষণের ব্যয় রানা খলিফার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে অর্থ আদায় করে খরচ চালাবেন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে রানাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা রানার সম্পদ থেকে আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জামা দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিশোরীকে ধর্ষণ করেছেন রানা খলিফা এবং ওই কন্যাশিশুর আসল বাবাও তিনি। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য–প্রমাণের মাধ্যমে ঘটনাটি প্রমাণ করতে পেরেছে। আদালতের রায়ে আমরা সন্তষ্ট।’
এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামির পরিবার উচ্চ আদালতে আপিল করবে বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী আল–আমিন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় নেতারা ধর্ষণসহ বহু অপকর্মই করে থাকেন, যার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অভিযোগ করতেও ভয় পান। স্থানীয় পদপ্রাপ্ত প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে থানা প্রশাসনও এক প্রকার নমনীয় থাকেন। সেটা হোক ভয় অথবা কোনো বিনিময় মাধ্যমে। খুব ঠেকায় না পড়লে স্থানীয় প্রশাসন মামলা নেন না। ফলে স্থানীয় নেতারাও লিপ্ত থাকেন লাগাম ছাড়া অপরাধকর্মে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মসহ স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, ক্ষমতার কারণে স্থানীয় নেতাদের কুদৃষ্টির শিকার হোন গ্রামের অসহায় নারীরা এবং ধর্ষণের শিকার হলেও অভিযোগ তুলতে কিংবা মামলা করতে ভয় পান। দেশে আইনের অনুশাসনের অভাব রয়েছে বলে এসব ঘটনা ঘটে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ