শরণার্থী ও শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি আর আবরারের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ আগস্ট ফরিদপুরে। তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে টানা চার দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খ্যাতিমান এই অধ্যাপক শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। সাম্প্রতিক করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যার গতিমুখ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক কৌশলসহ নানা বিষয় নিয়ে দেশ রূপান্তরের মুখোমুখি হয়েছেন অধ্যাপক সি আর আবরার। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিন্দ্য আরিফ
দেশ রূপান্তর : রোহিঙ্গা সংকটের তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মিয়ানমারে এই জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়েছে। বরং চলতি বছরের শুরু থেকেই কভিড-১৯ মহামারীর কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মনোযোগ হারিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মিয়ানমারের অপপ্রচারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীন ভূমিকায় সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সি আর আবরার : শরণার্থী প্রত্যাবাসন তখনই সম্ভব হয়, যখন যে কারণে তারা অন্য দেশের শরণ প্রার্থনা করেছিলেন, সে কারণটি সম্পূর্ণ দূরীভূত না হলেও অন্ততপক্ষে লাঘব হয়। যেমন ১৯৭১ সালে আমাদের এখানে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা দীর্ঘ নয়মাস গণহত্যা চালানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন। তারপর নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে তারা যখন এখানকার ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন, তখন যারা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, সে সমস্ত মানুষ বিভিন্নভাবে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এজন্য কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সে রকম কোনো আয়োজন করতে হয়নি। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিষয়টি কিন্তু একরকম নয়। তাদের ওপর গণহত্যা এবং নির্যাতন-নিগ্রহ চালানোর উৎস যে রাষ্ট্র এবং শাসক গোষ্ঠী, তারা শুধু সেখানে টিকেই আছে না, উপরন্তু বলীয়ান হয়ে আছে। মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু ইকোনমিক মাইগ্রেন্ট নয়, তারা প্রকৃতই শরণার্থী। আর শরণার্থী নিজ ভূখন্ডে ফিরে যাওয়ার মূল শর্তই হচ্ছে, যে কারণে তারা শরণার্থী হয়েছেন, সেই কারণটি দূরীভূত হওয়া। কিন্তু আমরা দেখছি যে, সে কারণটি দূরীভূত না হয়ে আরও ঘনীভূত হয়েছে। সেই দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র আরও উন্মত্ততা প্রকাশ করছে। তার অপরাধের চিহ্নগুলো ধ্বংস করে ফেলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যে রকম চাপ প্রয়োগ করার প্রয়োজন ছিল, তার খুব একটা দৃশ্যমান নয়। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে তা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এটা হলো একটা দিক। আরেকটি দিক হলো আমরা যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছি, তা দ্বারা এটা আশা করা সমীচীন হবে না যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খুব শিগগিরই নিজভূমে ফিরবেন। এখানে তিনটা ব্যাপার কাজ করার কথা ছিল। প্রথমত, একটা নির্দ্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া; দ্বিতীয়ত, তারা যখন ফিরে যাবেন তখন সেখানে একটা আন্তর্জাতিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা, যাদের কাজ হবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ হচ্ছে, সেটা তদারক করা; তৃতীয়ত, কাদের ফেরত নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে একটা ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত হওয়া। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই করা যায়নি। এ ব্যাপারগুলো আমরা মিয়ানমারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। মিয়ানমার এ সুযোগে শুধু টালবাহানাই করছে না, বরং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে একটা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে। মোদ্দা কথা, আমরা যেভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, সেগুলোতে একটা বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকার কারণেই এটা ঘটছে। আর কভিড-১৯ সমস্যাটিকে আরও ঘনীভূত এবং দীর্ঘায়িত করছে। তবে কভিড-১৯ এখানে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ উপরোক্ত তিনটা শর্ত।
দেশ রূপান্তর : জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার আবেদন ও মধ্যস্থতায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে রোহিঙ্গাদের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার বা ৬০ কোটি ডলারের মানবিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর এ সিদ্ধান্তটি হয়। আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর এ সহায়তার মাধ্যমে কী মনে হচ্ছে না যে তারাও ধরে নিয়েছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হবে?
সি আর আবরার : এটা ঠিক যে, আমাদের একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে রোহিঙ্গারা রয়েছেন। তাদের জন্য হোস্ট কমিউনিটি একটা বিপাকের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের দেখভালের জন্য বাংলাদেশের একটা খরচ হচ্ছে। তবে তাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে বেশিরভাগই খরচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বহন করে আসছে। এই সমস্যা যে প্রলম্বিত হবে, এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি দীর্ঘমেয়াদি কিছু তহবিল আসে, তাহলে কর্র্তৃপক্ষের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এটা একটা দায়িত্ব এবং তারা সেই দায়িত্বের কিছুটা হলেও পালন করছে। কিন্তু এর যে প্রকৃত সমাধান, সেটা তারা করছে না। তাই তারা ধরেই নিচ্ছে যে বিষয়টি প্রলম্বিত হবে। এজন্য যে ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা দরকার ছিল, তার একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং চীনের যে ভূমিকা তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। এটা সাধারণ জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। কেননা, বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী হিসেবে তাদের স্বার্থরক্ষা করে আসছে। বিশেষ করে ভারত এখান থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। তারা এগুলো একতরফাভাবে আদায় করে নিয়েছে। তিস্তার পানিরও সমাধান হয়নি, আমাদের যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ছিল, সেগুলোও খুব একটা আদায় হয়নি। যখন মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন দেখা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে সফর করছেন এবং তাদের সামরিক প্রধানকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, বিষয়টি খুবই ইনসেন্সেটিভ। চীনও একই ধরনের ভূমিকা পালন করছে। আমরা এক্ষেত্রে তাদেরও যে বাংলাদেশে স্বার্থ রয়েছে, সেটা বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না। চীনের হয়তো মিয়ানমারের সঙ্গে ভূকৌশলগত স্বার্থ রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশেও তো চীনের বড় ধরনের পণ্যবাজার রয়েছে। সেটা তো ফেলনা নয়। এটাও ভূকৌশলগত স্বার্থের বিবেচনায় কিন্তু কম নয়। আমরা হয়তো এটা তাদের বোঝাতে পারছি না। ফলে তারা মিয়ানমারকে প্রাধান্য দিচ্ছে এবং এই দৃর্বৃত্ত রাষ্ট্র আরও দুর্বৃত্তপনা দেখাচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা রয়েছেন, তাদের বড় দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইনভলভড করা। এমনকি বৈশ্বিক নাগরিক সমাজের সমর্থনও এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্মরণ করা যেতে পারে। তবে এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানবাধিকারের বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি রাষ্ট্রের বৈঠকে তো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু সেটা প্রাধিকার না পেয়ে জাতিগত ক্ষুদ্র স্বার্থই বেশি বিবেচিত হচ্ছে। এক ধরনের জাতিগত স্বার্থই এখন তাদের বেশি তাড়িত করছে। যার ফলে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের বিবেচনায় সবচেয়ে নিগৃহীত জাতিসত্তা হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : মিয়ানমারে ভারত, জাপান ও রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তিগুলো সরাসরি বিনিয়োগ করছে। সব দেশই মিয়ানমারকে উচ্চফলনশীল বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে দেখে।
সি আর আবরার : আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঠিকভাবেই বলেছেন, মিয়ানমারে অনেক শক্তিধর রাষ্ট্র তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েই চলেছে। যে রাষ্ট্রটিকে বয়কট করা প্রয়োজন, সেই রাষ্ট্রটিতেই তারা বিনিয়োগের প্রতিযোগিতায় পরস্পর লিপ্ত হচ্ছে। চীন এবং ভারত আরাকান অঞ্চলে যে বিনিয়োগ করতে চাইছে, তা অনেকটা নিরাপত্তাঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে, ভারতের যোগাযোগ প্রকল্প তো হুমকির মধ্যেই রয়েছে। কেননা, আরাকান আর্মি এ প্রকল্পগুলোকে ভালোভাবে দেখছে না। তারা তাদের শত্রু বর্মী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা ইতিমধ্যে দিয়েছে। কাজেই এসব বৃহৎ রাষ্ট্র যে বাস্তবতাকে এখন সঠিক মনে করছে, সে বাস্তবতা ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। তাই তারা একটা জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে শুধু তাদের জমি দখল করে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করে যাবে এবং তার ফল ভোগ করবে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অবিবেচনাপ্রসূত হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। এর খেসারত তাদের ভবিষ্যতে দিতে হতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যাশা, তাদের একসময় বোধোদয় ঘটবে এবং তারা এই দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের পক্ষে যে একপেশে অবস্থান নিয়েছে, সেখান থেকে সরে আসবে।
দেশ রূপান্তর : সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট স্টিফেন ই. বিগান রাষ্ট্রীয় সফরে এসে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত উদ্যোগ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)-তে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। আইপিএসের মূল উদ্দেশ্য এই যে, চীন পশ্চিমের একমাত্র অর্থনৈতিক শত্রু, এবং ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য যেকোনো উপায়ে ঠেকাতেই হবে। কিন্তু বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (আইপিএস) পক্ষে সমর্থন বা অসমর্থন কোনোটিই দেয়নি। এ অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
সি আর আবরার : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু তাদের প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন দেশের সামরিক স্বৈরশাসকদেরও সহায়তা করেছে। তাহলে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে তারা নিজেদের স্বার্থেই এগুলো করছে। এখন বাংলাদেশ যে ব্যালেন্সিং অ্যাক্টের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা ইতিবাচক। সবসময়ে মনে রাখতে হবে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কূটনৈতিক তৎপরতায় শামিল হওয়া যাবে না। এখানে জাতীয় স্বার্থটাই মূল বিবেচ্য। এটাকে বিবেচনায় নিয়েই ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট করতে হবে। আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ সেটারই চেষ্টা চালাচ্ছে। দেখা যাক কী দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
দেশ রূপান্তর : কক্সবাজারের স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী মনে করছে রোহিঙ্গারা শুধু তাদের জীবন-জীবিকাতেই ভাগ বসাচ্ছে না, বরং স্থানীয় সমাজব্যবস্থায় গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে বসছে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছে ওই এলাকায়। এদিকে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার ফাঁকফোকর গলেই রোহিঙ্গাদের ক্ষুদ্র একটি অংশ ঢুকে পড়েছে ইয়াবা-মাদক-অস্ত্র কালোবাজারি, খুন-রাহাজানি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
সি আর আবরার : কক্সবাজার যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর একটি, তাই এখানে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি একটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে, এটাই স্বাভাবিক। এটা একটা দিক। আবার এই রোহিঙ্গারা নির্মাণশিল্পে কিংবা মৎস্যচাষের ক্ষেত্রে সস্তা শ্রমশক্তি দেওয়ায়, অনেক বাংলাদেশিও লাভবান হচ্ছেন। এটা তাই একপক্ষীয় বিষয় নয়। একটা বড় অংশ হয়তো বা সাফার করছে, কিন্তু রোহিঙ্গা আসার ফলে একটা অল্প অংশ কিন্তু লাভবানও হচ্ছে। সেখানে রেন্ট বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। আবার রোহিঙ্গাদের জন্য কিন্তু হোটেল অক্যুপেন্সি বেড়েছে। আগে যেখানে শুধু শীতকালে হোটেল অক্যুপেন্সি হতো, সেখানে সারা বছরই ত্রাণকাজের জন্য হোটেল অক্যুপেন্সি হচ্ছে। আর ল’ অ্যান্ড অর্ডারের ব্যাপারে আমি রোহিঙ্গাদের একতরফাভাবে দোষী করতে রাজি নই। ওই অঞ্চলে যে ইয়াবা কিংবা আর্মস স্মাগলিং হয়, তার মূল হোতা কিন্তু বাংলাদেশিরাই। রোহিঙ্গা আসার অনেক আগে থেকেই এ প্রবণতা ছিল। এখানে বহু দেশীয় রথী-মহারথীরা জড়িত। সুতরাং এটা একটা ভুল চিত্রায়ণ। এখানে রোহিঙ্গারা সহযোগী হতে পারে, কিন্তু নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন বাংলাদেশিরাই। এখানকার মতো সংবেদনশীল জায়গায় যখন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকে, যিনি নিজেই আইনের ধার ধারেন না এবং নিজেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত। এই ব্যক্তিই বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডসহ নানা অপরাধ সংঘটনের দায়ে এখন গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তাই শুধু রোহিঙ্গাদের ওপর সমস্ত দায় চাপানো কখনোই ঠিক হবে না।
আপনার মতামত জানানঃ