মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক দিয়ে বড় ধরনের মিছিল করেছে দেশটির জনগণ। মিছিলে তেল আবিবকে অবৈধ ও দখলদার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্সের আইন শাখার পরিচালক মুর্তজা খাজা এই ইসরায়েলবিরোধী নাগরিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলকে অবৈধ ও দখলদার দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তেলআবিবকে অর্থ সহায়তা প্রদান বন্ধ করার আহ্বান জানান।-খবর আরব নিউজের।
আরব নিউজের খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ইসরায়েল-বিরোধী এত বড় মিছিল ও বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়নি। তারচেয়েও বড় কথা হলো দেশটির বিরুদ্ধে কথা বলাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বলা তাদের নাগরিক অধিকার।
একইভাবে গত মাসে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যেও ইসরাইলের মানবতাবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে।
মার্কিনীদের ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের কারণ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা ইহুদিদের সাম্রাজ্যবাদী, বর্ণবাদী, এমনকি নাৎসি ও উগ্র শেতাঙ্গবাদী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করছেন।
সম্প্রতি তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) এর গবেষণায় দেখা যায়, ‘অনেক শিক্ষার্থী ইসরায়েলের শিক্ষার্থীদের জাতিচ্যুত দেশের প্রতিনিধি হিসাবে দেখে। কিছু শিক্ষার্থী ইহুদিবাদে বিশ্বাসী ছিল। তারা ইসরায়েলের পরিচয় দিলে তাদেরকে নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে’।
‘ইহুদিবাদবিরোধী মনোভাব বিভিন্ন উপায়ে বিকশিত হচ্ছে। তার একটি হলো মার্কিন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইহুদিরা গোপনে সরকারে অনুপ্রবেশ করেছে। নিয়মিত ইসরায়েলবিরোধী প্রচারণা (বয়কট করা, বর্জন করা এবং নিষেধাজ্ঞা দেয়া), নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার পাওয়া এই মনোভাবের পেছনে কাজ করেছে’।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ‘মার্কিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসরায়েলকে বয়কট, বর্জন ও নিষেধাজ্ঞার মনোভাব বাড়ছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনপন্থিদের আন্দোলন বিডিএস এর প্রতি সমর্থন বাড়ছে’।
বিডিএস ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত। এই আন্দোলন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং সমতা দাবি করে, ইসরায়েলি পণ্য বর্জন এবং নিষেধাজ্ঞার প্রদানের প্রচার করে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নিপীড়নের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অব্যাহত রাখতে কাজ করে। এই অবস্থা ইসরায়েলের জন্য অসুবিধাজনক হবে বলে মনে করা হয়।
ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভূমিতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নেতানিয়াহু ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস উভয়েই তাদের সরকারের পক্ষ থেকে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ওপর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারিক প্রচেষ্টার বিরোধিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই নেতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং ‘বিপজ্জনক’ আচরণের বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।
হোয়াইট হাউস বলেছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অটল রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন কমলা হ্যারিস।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ