খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (টিএসসি) দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সোহেল রানা নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার(০২ মার্চ) দুপুরে সদর থানায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। অবশেষে শিক্ষক সোহেল রানাকে বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকার আগারগাঁও থেকে আটক করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুরে খাগড়াছড়ির চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমানের আদালতে অভিযুক্ত শিক্ষককে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মোহাম্মদ রশিদ জানান, সোহেলকে বুধবার রাতে ঢাকার আগারগাঁও থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেছিলেন ওই ছাত্রীর বাবা।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সোহেল রানা খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (টিএসসি) অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত ১ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে খাগড়াছড়ি সদর থানায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে সোহেল রানাকে বদলি করে হেড অফিসে সংযুক্ত করা হয়।
মামলার এজাহারে ভিকটিমের পিতা অভিযোগ করেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানা তার মেয়েকে ফেল করিয়ে দেওয়া ও নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা করে।
পুলিশ জানায়, দশম শ্রেণির ছাত্রীকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন শিক্ষক সোহেল রানা। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা গত ২ মার্চ খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করলে গত বুধবার রাতে ঢাকার আগারগাওঁ এলাকা থেকে অভিযুক্ত সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশীদ জানান, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ধর্ষণচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত আসামিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে দ্রুত এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
স্কুলছাত্রী ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে গত মঙ্গলবার কলেজের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
বক্তারা শিক্ষকের ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একজন শিক্ষকের কাজ থেকে এমন আচরণ কোনভাবে কাম্য নয়। একজন শিক্ষকের এমন ঘৃণ্যতম কাজে পুরো শিক্ষক জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। দায়ী শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষকদের যৌন লালসার শিকার হয়ে ছাত্রীরা এখন বিদ্যালয়ে পা মাড়াতে ভয় পায়। শিক্ষকদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক সম্পর্ক ব্যবহত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে যেসব অগ্রগতি সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষকদের এমন যৌন লালসার কারণে একদিকে যেমন শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে নারীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়ছে বলে মনে করেন তারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠানে সবধরনের যৌন হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
তারা জানান, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার সাথে নৈতিকতার মানও ক্রমশ নিম্নগতিতে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ আসে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের খবরও আসে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এক বার্তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ যেমন একদিকে নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধ। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নারীদের জন্যও নিরাপদ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর যৌন হয়রানি একদিকে যেমন লজ্জার অন্যদিকে ভয়াবহ এক বার্তাও বটে। শিক্ষকদের থেকেও ছাত্রীরা নিরাপদ নয়, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১১২
আপনার মতামত জানানঃ