করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ জন খামারিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা নগদ আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারির সংখ্যা ৪ লাখ ৭ হাজার ৪০২ জন ও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষির সংখ্যা ৭৮ হাজার ৭৪ জন। প্রদেয় অর্থ খামারিদের প্রদত্ত বিকাশ, নগদ এবং ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তবে গুরুদাসপুর প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা প্রদানে তালিকা তৈরিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দের পুরো টাকাই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক প্রকৃত গাভী খামারি গত বুধবার(২৪ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অফিসে অভিযোগ দিতে এলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন অফিসের লোকজন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে মারধরের হুমকি দিয়ে অফিস থেকে তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগকারীরা জানান। পরদিন তারা প্রাণিসম্পদ অফিসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের একটি লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর।
জানা যায়, যাচাই-বাছাই শেষে উপজেলায় এক হাজার ৬৬০ জন প্রকৃত গাভী খামারির তালিকা করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ওই এক হাজার ৬৬০ জন খামারির মাঝে এক কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। গাভী পালনকারীদের প্রত্যেককে ১০ হাজার ১৬০ থেকে ২২ হাজার ৫০০ পর্যন্ত টাকা দেওয়া হয়েছে। লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডাররা প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেন।
অভিযোগকারীরা জানান, যারা গাভী পালন করেন তারা প্রণোদনা পাননি। অথচ আদৌ গরু পালন করেন না এমন লোকদের কাছ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে গোপনে তাদের তালিকা করে প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারী আ. লতিফ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত পাটপাড়া গ্রামের খোয়াজের ছেলে ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে তারা দাবি করেন। উপজেলার অন্তত ১০০টি বাড়িতে তারা গরু পালন না করলেও প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, পাটপাড়া ও সোনাবাজু গ্রামের খামারিদের অভিযোগ প্রত্যাহারের শর্তে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার করে টাকা দালাল চক্রের সদস্যরা দেবে মর্মে আপস মীমাংসা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মানু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, তবে ভুলত্রুটি থাকতে পারে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, এলএসপি তালিকা করেছেন। এক হাজার ৬৬০ জনের মধ্যে ১০ জনের বিষয়ে তদন্ত করেছিলাম। প্রকল্পের লোকজন অনিয়ম করে থাকলে তার দায়ভার তাদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহকারী কমিশনারক (ভূমি) প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অথচ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উদ্ভোধনী দিনে বলেছিলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল টাকাটা যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে না পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করে বলেছিলেন যে, খামারিকে তার নির্দিষ্ট মোবাইল নাম্বারেই টাকাটা পৌঁছতে হবে। আমরা একটার পর একটা করে পুনঃনিরীক্ষণ করেছি, যেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বাদে অন্যের নাম্বারে টাকাটা না যায়।
অনিয়ম এড়াতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি খামারির হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল এই প্রণোদনা। কিন্তু গুরুদাসপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সারাদেশেরর খামারিদের প্রণোদনা প্রাপ্তি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যত করেই বলা হোক না কেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা প্রদানে অনিয়মের বালাই এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে, যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে তারা এসবের ফাঁকফোঁকর ঠিকই বের করে ফেলেন। তারা বলেন, করোনাকালে বাজার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত হওয়ায় উৎপাদন ও বিপণন ব্যহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েক লাখ খামারি। সংকটকালে সরকারের প্রণোদনা তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করার কথা থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে তার চিত্র উল্টো। যারা গাভিই পালে না তারাই পাচ্ছে খামারি প্রণোদনা। এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত খামারিদের অভিযোগ গ্রহণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৩১৩
আপনার মতামত জানানঃ