রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ইউএনও কার্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিজয় চাকমা। এসময় অস্ত্রধারীরা অফিসে ঢুকেই ইউএনওর সামনেই প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়তে শুরু করেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হোন বিজয় চাকমা। আজ বুধবার(২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম সমর বিজয় চাকমা (৪০)। তিনি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছিলেন। সমর বিজয় চাকমা জেএসএস (এমএন লারমা) দলের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনমনে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুর পৌনে ১টার দিকে উপজেলা প্রশাসন ভবন চত্বরের ভেতরে দ্বিতীয় তলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কক্ষে অবস্থান করছিলেন ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমা। এ সময় একজন অস্ত্রধারী ওই কক্ষে ঢুকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরনবী সরকার জানিয়েছেন, ‘ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমা আমার সঙ্গে প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলছিলেন। এসময় দুই-তিন জন ব্যক্তি দরজার বাইরে উঁকি দিচ্ছিলো। পরে একজন রুমে প্রবেশ করে সমর বিজয়ের দিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে এবং দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় অবস্থিত। এই কার্যালয়ের তিনটি রুম পরেই একটি কক্ষে অফিস করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে এসেছিলেন। কিন্তু দুই জন মোটরসাইকেল আরোহী এসে তাকে অফিসেই গুলি করে হত্যা করে চলে যায়।’
রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্যামল চাকমা বলেন, নিহত সমর বিজয় চাকমা ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। আজ সকালেও দুজন একসঙ্গে চা খেয়েছেন। পরে তিনি শোনেন তাকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, বিজয় চাকমার লাশ পড়ে আছে।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, নিহত সমর বিজয় চাকমা তাদের সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্তু লারমা সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র ক্যাডারদের দায়ী করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি এবং ইউপি সদস্যকে গুলিবিদ্ধ ও মৃত অবসস্থায় চেয়ারেই পড়ে থাকতে দেখি।
এ ঘটনায় কারা জড়িত তা এখনও জানা যাচ্ছে না। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ঢুকে এক ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্যকে গুলি করে হত্যা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে খুনের সংবাদ আসলেও সরকারি অফিসে ঢুকে ইউএনওর সামনে এভাবে গুলি ছুঁড়ে হত্যা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের ভয়ানক এক বার্তা দেয়। দোষীদের অতিসত্বর আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ