দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মনজুর আলমের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখাসহ আরও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি ব্যাপক টাকা লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে আজ মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অধ্যক্ষের অপসারণ ও বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে শিক্ষকরা তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বোচাগঞ্জ থানা পুলিশ এসে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে।
জানা যায়, সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অভ্যন্তরীণ অডিটে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়। যার প্রতিবেদন ৮ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকট দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে অনার্স বিভাগের ৩৬ জন শিক্ষকসহ ৭০ জন শিক্ষক বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা আদায়ের দাবিতে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে। পরে বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মো. জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘অধ্যক্ষ কলেজের প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি কলেজের ফান্ড শুন্য করে অনার্স বিভাগের শিক্ষকদের বকেয়া বেতন দিতে গড়িমসি করছেন। তারই ফলশ্রুতিতে অধ্যক্ষের অপসারণসহ তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।’
অধ্যক্ষ মনজুর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। তাই আমি অভ্যান্তরীণ অডিটে যে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তা আমি পুনঃতদন্তের জন্য কলেজের সভাপতি বরাবরে আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, অর্নাসের শিক্ষকদের ২/১ মাসের বেতনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমি যদি কলেজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে থাকি তাহলে আমি পদত্যাগ করব।
এর আগেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে অধ্যক্ষ মনজুর আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। অভিযোগ, অনার্সের ১০টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে বেতন বাবদ ৫শত পঞ্চাশ টাকা করে আদায় করা হয়, এছাড়া অন্যান্য ভর্তি ফি বাবদ চার হাজার পঞ্চাশ টাকা, ফরম পূরন ফি বাবদ দুই হাজার ৫২০ টাকা, ইনকোর্স ফি বাবদ ৫শত টাকা আদায় করা হয়।
এর আগে আইএফআইসি ব্যাংক সেতাবগঞ্জ শাখায় সব টাকা জমা নেওয়া হত কিন্তু ২০১১ সালে যোগদান করার পর থেকে অধ্যক্ষ মনজুর আলম ব্যাংক জমা বন্ধ করে দিয়ে নামমাত্র রশিদে হাতে নগদ টাকা জমা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও কলেজের বিভিন্ন শাখায় অনুরুপভাবে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। যার হিসাব কলেজের ক্যাশ বহিতে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় না।
অপরদিকে গত ৫ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে অধ্যক্ষ মনজুর আলমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৭টি অভিযোগের ভিত্তিতে চলমান পুনঃতদন্তে জেলা সমন্বিত কার্যালয় দিনাজপুর দুদকের উপ-পরিচালক এ.এইচ আশিকুর রহমান ও সহকারী পরিচালক মোঃ ওবায়দুর রহমান সহ একটি তদন্ত দল সেতাবগঞ্জ কলেজে আসেন। তদন্তকালে কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির ৭জন সদস্যকে গত ১০ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে দুদকের জেলা কার্যালয় তলব করেন। এখানে অডিট কমিটি লিখিতভাবে উপ-পরিচালকের নিকট উক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯১ লক্ষ ৭০ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সহ দালিলিক প্রমাণাদি দাখিল করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে কেবল প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতিই হয় না, শিক্ষার পরিবেশ থেকে শুরু করে কলেজের মেরুদণ্ডটিও ভেঙ্গে পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা যখন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তখন প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার মানও ভেঙ্গে পড়ে। আগামী প্রজন্মের স্বাভাবিক ও নৈতিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতার আশু সমাধান আবশ্যক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, শিক্ষকেরাই যখন অনৈতিকতায় ডুবে যান তখন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রজন্ম কী পেতে পারে এবিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। অধ্যক্ষের এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১১৯
আপনার মতামত জানানঃ