মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক মাদ্রাসাছাত্রদের ধর্ষণের অভিযোগ প্রায় নিয়মিত খবরে দাঁড়িয়ে গেছে। মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের এহেন ধর্ষণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দেশ। মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়ে মানুষের মনেও জন্মেছে নেতিবাচক মনোভাব। এসব খবরের মধ্যে ইতিমধ্যে শোনা গেলো মাদ্রাসার এক ছাত্র কর্তৃক একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ। ওয়াজ শুনতে গিয়ে ১০ বছরের মাদরাসাছাত্র একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্র কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার কালীকচ্ছ চাঁনপুরের একটি মাদরাসা থেকে অভিযুক্ত ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক ছাত্রের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলায়। সে সিরাজবাগ নূরানী ও হাফেজীয়া মাদরাসার আমপারা শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যার দিকে সিরাজবাগ নূরানী ও হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্ররা পার্শ্ববর্তী এলাকায় কালীকচ্ছ বর্ডার-বাজার বায়তুল জামে মসজিদের বার্ষিক মাহফিলে ওয়াজ শুনতে যায়। সাড়ে ৬টার দিকে অভিযুক্ত মাদরাসার ছাত্র ১০ বছরের ওই ছাত্রকে মুখ চেপে ধরে মসজিদের ছাদে নিয়ে ধর্ষন করে। রাতেই ওই ছাত্র মাদরাসার শিক্ষক ও তার নানাকে ঘটনাটি জানায়। পরে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই মাদরাসা থেকে অভিযুক্তকে আটক করে।
এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরিফুজ্জামান হিমেল গণমাধ্যমকে জানান, ভুক্তোভোগী ছাত্রকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ছাত্রের পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না, সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ওই ছাত্রকে দেখে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রকে মাদরাসা থেকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদ্রাসায় ছাত্র ধর্ষণের ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিকি ব্যাপারে দাঁড়িয়ে গেছে। ধর্মীয় শিক্ষা নিতে ভর্তি হওয়া কোমলমতি ছাত্ররা ধর্ষণের শিকার হওয়ায় মাদ্রাসা বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে লোকজনকে। মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্তৃক শিশু ধর্ষণ হলেও শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না মাদ্রাসারই অন্য বড়ভাইদের হাত থেকেও। ক’দিন আগেও এক মাদ্রাসাছাত্রকে খুন করে ছাত্রদের বিছানাপত্র দিয়ে চেপে রাখার ঘটনাও চাউর হয়। বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছিলেন, এটা অন্য ছাত্রদের কর্তৃক খুনের ঘটনা। তারা বলেছিলেন, অন্য ছাত্র কর্তৃক ধর্ষণের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে ওই ছাত্র। পরে ভয়ে বেডিংয়ের স্তুপ দিয়ে চেপে রাখা হয়। এবিষয়ে এখনো সুরাহা হয়নি। এরইমধ্য খবর এলো ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে মাদ্রাসার এক ছাত্র কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে একই মাদ্রাসার এক ছাত্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদ্রাসায় যে হারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে এবিষয়ে সমাধানের জন্য সরকারকে ভাবতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এহেন ঘটনা একদিকে যেমন মেনে নেওয়া যায় না অন্যদিকে লোকসমাজেও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও ছাত্রদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। তারা বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও যদি সন্তান নিরাপদ না থাকে তবে অভিভাবকের মনে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি হবে। তারা এবিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসার আহ্বান করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ