আমেরিকান টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা ফাইজার এবং তার জার্মান সহযোগী বায়োএনটেক এ বার দাবি করল, তুলনামূলক গরম তাপমাত্রাতে ভাল থাকবে তাদের টিকা। শুরুতে তারা জানিয়েছিল, ভ্যাকসিন সংরক্ষণে মেরুপ্রদেশীয় ঠান্ডা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছিল। এত দিন মাইনাস ৬০ থেকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মজুত রাখা হচ্ছিল ভ্যাকসিন। অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় বলে ফাইজারের টিকা কেনায় পিছিয়ে এসেছিল গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলো। তবে ফাইজার এখন দাবী করছে, সাধারণ ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্রিজার ও রেফ্রিজারেটরেও তাদের ভ্যাকসিন ভালো থাকবে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনে (এফডিএ) জমা দিয়েছে টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি।
এখন পুরনো গাইডলাইন সংশোধন করে ফাইজার এফডিএকে জানিয়েছে, তাদের টিকা মাইনাস ১৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে। অর্থাৎ সাধারণ ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্রিজার ও রেফ্রিজারেটরেই এ টিকা সংরক্ষণ করা যাবে। ফাইজারের সিইও অ্যালবার্ট বোরলার এ ব্যাপারে বলেছেন, এফডিএর কাছে আমাদের আবেদন যদি ছাড়পত্র পায়, তাহলে টিকা কেন্দ্রগুলোর ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও সরবরাহ পদ্ধতি আরো সহজ হয়ে যাবে।
এদিকে ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফাইজার-এর কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ফাইজার জানিয়েছে, গরম আসার মধ্যেই যথেষ্ট ভ্যাকসিন মজুত করে ফেলা হবে। সংস্থার সিইও বোরলা-ও জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সপ্তাহে ৫০ লাখ ডোজ সরবরাহ করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে পরিমাণটা দ্বিগুণেরও বেশি করা।
এর আগে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ভ্যাকসিন মজুতের বিষয়ে আমরা এখন অনেকটাই ছন্দে ফিরেছি। জুলাই মাসের মধ্যে সমস্ত আমেরিকান বাসিন্দার টিকাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন হাতে চলে আসবে। তিনি বলেন, কবে সব ঠিক হয়ে যাবে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ভ্যাকসিন মজুত করা নিয়ে আমেরিকা-ইউরোপ স্বস্তি প্রকাশ করলেও অসন্তুষ্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। টিকার সমবণ্টন করার দাবি তুলেছে তারা। এ প্রশ্নও তুলেছে, কেন ১৩০টি দেশ এখনও একটি ডোজও পায়নি? রোববার ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) জানিয়েছে, শুধু নিজেদের সমস্যার কথা না-ভেবে ব্রিটেনের উচিত গরিব, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করা।
করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণার পরপর ভ্যাকসিন পেতে উঠেপড়ে লাগে কয়েকটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই অধিকাংশ ভ্যাকসিন নিজের দেশের জন্য অগ্রিম কিনে নেয়ার চেষ্টা করেন। এরপর ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ব্রাজিলও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়।
এদিকে ভ্যাকসিন থেকে দরিদ্র দেশ বঞ্চিত হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি। এতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা উন্নয়শীল দেশগুলোর মতো উন্নত দেশগুলোতেও লাগবে বলে অতীতের কয়েকটি গবেষণা জানিয়েছিল। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ধনী দেশগুলো তাদের শতভাগ নাগরিককে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে পারবে। অথচ তখনো ভ্যাকসিনেশন থেকে অনেক দূরে থাকবে দরিদ্র দেশগুলো। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এ অংকটি জাপান ও জার্মানির সম্মিলিত বার্ষিক জিডিপির চেয়েও বড়। তবে এ ক্ষতিতে এখানে অর্ধেকের বেশি মূল্য চুকাতে হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের মতো ধনী দেশগুলোকে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ